আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭২৫
২৪৪৮. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ وإذ قال موسى لفتاه لا أبرح حتى أبلغ مجمع البحرين أو أمضي حقبا স্মরণ কর যখন মুসা তার খাদেমকে বলেছিলেন, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। حقبا অর্থ যুগ, তার বহুবচন أحقاب
৪৩৭০। হুমায়দী (রাহঃ) ......... সাইদ ইবনে জুবাইর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস কে বললাম, নওফাল বাক্কালীর ধারণা, খিযিরের সাথী - মুসা, তিনি বনী ইসরাইলের নবী মুসা ছিলেন না। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর দুশমন[১] মিথ্যা কথা বলেছে। (ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন) উবাই ইবনে কা‘ব (রাযিঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছেন, মুসা (আলাইহিস সালাম) একদা বনী ইসরাইলের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, কোন ব্যক্তি সবচে অধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমি। এতে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা এ জ্ঞানের কথাটিকে তিনি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করেননি। আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন, দু সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে[২] আমার এক বান্দা রয়েছে। সে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইয়া রব! আমি কিভাবে তার সাক্ষাত পেতে পারি? আল্লাহ বললেন, তোমার সাথে একটি মাছ নাও এবং সেটা থলের মধ্যে রাখ। যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই। তারপর তিনি একটি মাছ নিলেন এবং সেটাকে থলের মধ্যে রাখলেন। অতঃপর রওয়ানা দিলেন। আর সঙ্গে চললেন তাঁর খাদেম ইউশা ইবনে নুন। তারা যখন সমুদ্রের তীরে একটি বিরাট পাথরের কাছে এসে পৌঁছলেন, তখন তারা উভয়ই তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলের মধ্যে লাফিয়ে উঠল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেল। “মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।” আর মাছটি যেখান দিয়ে চলে গিয়েছিল, আল্লাহ সেখান থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন। এবং সেখানে একটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। যখন তিনি জাগলেন, তার সাথী তাকে মাছটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেদিনের বাকি সময় ও পরবর্তী রাত তারা চললেন।
যখন ভোর হল, মুসা (আলাইহিস সালাম) তার খাদেমকে বললেন, আমাদের প্রাতঃরাশ আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ যে স্থানের[৩] নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে মুসা (আলাইহিস সালাম) ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তখন তার খাদিম তাকে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মাছটি তার পথ করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল এবং মুসা (আলাইহিস সালাম) ও তার খাদেম কে তা আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছিল। মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমরা তো সে স্থান টিরই অনুসন্ধান করছিলাম।
তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তারা উভয়ে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে সে শিলাখণ্ডের কাছে ফিরে আসলেন। সেখানে এসে এক ব্যক্তিকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় পেলেন। মুসা(আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমাদের এ স্থলে সালাম কোত্থেকে?[৪] তিনি বললেন, আমি মুসা। খিযির (আলাইহিস সালাম) জিজ্ঞেস করলেন, বনী ইসরাইলের মুসা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি আপনার কাছে এসেছি এ জন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেন, তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবে না। হে মুসা! আল্লাহর জ্ঞান থেকে আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করা হয়েছে যা তুমি জাননা আর তোমাকে আল্লাহ তাঁর জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান দান করেছেন তা আমি জানি না।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আল্লাহ চাহে তো, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। তখন খিযির (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবে না, যতক্ষণ আমি তোমাকে সে সম্পর্কে না বলি।
তারপর উভয়ে চললেন। তারা সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। তখন একটি নৌকা যাচ্ছিল। তারা তাদের নৌকায় উঠিয়ে নেয়ার ব্যপারে নৌকার চালকদের সাথে আলাপ করলেন। তারা খিযির (আলাইহিস সালাম) কে চিনে ফেলল। তাই তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে নৌকায় উঠিয়ে নিল। “যখন তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন” খিযির (আলাইহিস সালাম) কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা বিদীর্ণ করলেন। (এ দেখে) মুসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, এ লোকেরা তো বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের বহন করছে, অথচ আপনি এদের নৌকাটি বিনষ্ট করতে চাইছেন। “আপনি নৌকাটি বিদীর্ণ করে ফেললেন, যাতে আরোহীরা ডুবে যায়। আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বলেন, আমি কি বলিনি যে তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেনা? মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যপারে অত্যধিক কঠোরতা আবলম্বন করবেন না’।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, মুসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রথমবারের এই অপরাধ টি ভুলবশত হয়েছিল। তিনি বললেন, এরপরে একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার পাশে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খিযির (আলাইহিস সালাম) মুসা (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, এ সমুদ্র হতে পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তারা নৌকা থেকে অবতরণ করে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। এমন সময় খিযির (আলাইহিস সালাম) একটি বালককে অন্য বালকদের সাথে খেলতে দেখলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, “আপনি কি জানের বদলা ছাড়াই এক নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবে না। নবী (ﷺ) বলেন, এ অভিযোগ করাটা ছিল প্রথমটির চাইতেও গুরুতর। (মুসা(আলাইহিস সালাম) বললেন) এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আপনার কাছে আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছে গিয়েছে।
তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে তারা এক জনপদের কাছে পৌঁছে তার অধিবাসীদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করাতে অস্বীকার করল। তারপর তথায় তারা এক পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে সেটি সোজা করে দিলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম। তারা আমাদের খাবার দিলনা এবং আমাদের মেহমানদারীও করলনা। “আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন”। তিনি বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে পার্থক্য ঘটল। যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা”।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমার মনোবাঞ্ছা হচ্ছে যে, যদি মুসা (আলাইহিস সালাম) আর একটু ধৈর্য ধারণ করতেন, তাহলে আল্লাহ তাদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সাইদ ইবনে জুবাইর (রাযিঃ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এভাবে এ আয়াত পাঠ করতেন - وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالِحَةٍ غَصْبًا، নীচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করতেন وَكَانَ يَقْرَأُ وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ
[১] নওফাল বাককালী- সে একজন মুসলমান। ইব্ন আব্বাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় ।
[২] ‘সঙ্গমস্থলের' অবস্থান সম্পর্কে মতভেদ আছে, নীল নদের দু'মাথার সঙ্গম বা দজলা ও ফুরাত নদীর সঙ্গম বা সীনাই উপত্যকায় উকাবা উপসাগর ও সুয়েজের মিলন স্থান ।
[৩] স্থানঃ যেখানে মাছটি হারানো যাবে ।
[৪] যে এলাকায় বসে মূসা (আ)-এর সাথে খিযির (আ)-এর সাক্ষাৎ হয়েছিল, সে এলাকায় কোন মুসলমান ছিল না। তাই তিনি মূসা (আ)-এর সালাম পেয়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, এ অমুসলিম এলাকায় সালামের প্রচলন কিভাবে হল ।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইয়া রব! আমি কিভাবে তার সাক্ষাত পেতে পারি? আল্লাহ বললেন, তোমার সাথে একটি মাছ নাও এবং সেটা থলের মধ্যে রাখ। যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই। তারপর তিনি একটি মাছ নিলেন এবং সেটাকে থলের মধ্যে রাখলেন। অতঃপর রওয়ানা দিলেন। আর সঙ্গে চললেন তাঁর খাদেম ইউশা ইবনে নুন। তারা যখন সমুদ্রের তীরে একটি বিরাট পাথরের কাছে এসে পৌঁছলেন, তখন তারা উভয়ই তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলের মধ্যে লাফিয়ে উঠল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেল। “মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।” আর মাছটি যেখান দিয়ে চলে গিয়েছিল, আল্লাহ সেখান থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন। এবং সেখানে একটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। যখন তিনি জাগলেন, তার সাথী তাকে মাছটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেদিনের বাকি সময় ও পরবর্তী রাত তারা চললেন।
যখন ভোর হল, মুসা (আলাইহিস সালাম) তার খাদেমকে বললেন, আমাদের প্রাতঃরাশ আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ যে স্থানের[৩] নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে মুসা (আলাইহিস সালাম) ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তখন তার খাদিম তাকে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মাছটি তার পথ করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল এবং মুসা (আলাইহিস সালাম) ও তার খাদেম কে তা আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছিল। মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমরা তো সে স্থান টিরই অনুসন্ধান করছিলাম।
তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তারা উভয়ে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে সে শিলাখণ্ডের কাছে ফিরে আসলেন। সেখানে এসে এক ব্যক্তিকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় পেলেন। মুসা(আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমাদের এ স্থলে সালাম কোত্থেকে?[৪] তিনি বললেন, আমি মুসা। খিযির (আলাইহিস সালাম) জিজ্ঞেস করলেন, বনী ইসরাইলের মুসা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি আপনার কাছে এসেছি এ জন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেন, তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবে না। হে মুসা! আল্লাহর জ্ঞান থেকে আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করা হয়েছে যা তুমি জাননা আর তোমাকে আল্লাহ তাঁর জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান দান করেছেন তা আমি জানি না।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আল্লাহ চাহে তো, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। তখন খিযির (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবে না, যতক্ষণ আমি তোমাকে সে সম্পর্কে না বলি।
তারপর উভয়ে চললেন। তারা সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। তখন একটি নৌকা যাচ্ছিল। তারা তাদের নৌকায় উঠিয়ে নেয়ার ব্যপারে নৌকার চালকদের সাথে আলাপ করলেন। তারা খিযির (আলাইহিস সালাম) কে চিনে ফেলল। তাই তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে নৌকায় উঠিয়ে নিল। “যখন তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন” খিযির (আলাইহিস সালাম) কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা বিদীর্ণ করলেন। (এ দেখে) মুসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, এ লোকেরা তো বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের বহন করছে, অথচ আপনি এদের নৌকাটি বিনষ্ট করতে চাইছেন। “আপনি নৌকাটি বিদীর্ণ করে ফেললেন, যাতে আরোহীরা ডুবে যায়। আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বলেন, আমি কি বলিনি যে তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেনা? মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যপারে অত্যধিক কঠোরতা আবলম্বন করবেন না’।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, মুসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রথমবারের এই অপরাধ টি ভুলবশত হয়েছিল। তিনি বললেন, এরপরে একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার পাশে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খিযির (আলাইহিস সালাম) মুসা (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, এ সমুদ্র হতে পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তারা নৌকা থেকে অবতরণ করে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। এমন সময় খিযির (আলাইহিস সালাম) একটি বালককে অন্য বালকদের সাথে খেলতে দেখলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, “আপনি কি জানের বদলা ছাড়াই এক নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবে না। নবী (ﷺ) বলেন, এ অভিযোগ করাটা ছিল প্রথমটির চাইতেও গুরুতর। (মুসা(আলাইহিস সালাম) বললেন) এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আপনার কাছে আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছে গিয়েছে।
তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে তারা এক জনপদের কাছে পৌঁছে তার অধিবাসীদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করাতে অস্বীকার করল। তারপর তথায় তারা এক পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে সেটি সোজা করে দিলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম। তারা আমাদের খাবার দিলনা এবং আমাদের মেহমানদারীও করলনা। “আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন”। তিনি বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে পার্থক্য ঘটল। যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা”।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমার মনোবাঞ্ছা হচ্ছে যে, যদি মুসা (আলাইহিস সালাম) আর একটু ধৈর্য ধারণ করতেন, তাহলে আল্লাহ তাদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সাইদ ইবনে জুবাইর (রাযিঃ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এভাবে এ আয়াত পাঠ করতেন - وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالِحَةٍ غَصْبًا، নীচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করতেন وَكَانَ يَقْرَأُ وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ
[১] নওফাল বাককালী- সে একজন মুসলমান। ইব্ন আব্বাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় ।
[২] ‘সঙ্গমস্থলের' অবস্থান সম্পর্কে মতভেদ আছে, নীল নদের দু'মাথার সঙ্গম বা দজলা ও ফুরাত নদীর সঙ্গম বা সীনাই উপত্যকায় উকাবা উপসাগর ও সুয়েজের মিলন স্থান ।
[৩] স্থানঃ যেখানে মাছটি হারানো যাবে ।
[৪] যে এলাকায় বসে মূসা (আ)-এর সাথে খিযির (আ)-এর সাক্ষাৎ হয়েছিল, সে এলাকায় কোন মুসলমান ছিল না। তাই তিনি মূসা (আ)-এর সালাম পেয়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, এ অমুসলিম এলাকায় সালামের প্রচলন কিভাবে হল ।
