আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৩৯৫২
আন্তর্জতিক নং: ৪২৮০

পরিচ্ছেদঃ ২২১২. মক্কা বিজয়ের দিন নবী কারীম (ﷺ) কোথায় ঝাণ্ডা স্থাপন করেছিলেন

৩৯৫২। উবাইদ ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... হিশামের পিতা [উরওয়া ইবনে যুবায়র (রহঃ)] থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী কারীম (ﷺ) (মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা করেছেন। এ সংবাদ কুরাইশদের কাছে পৌঁছলে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব, হাকীম ইবনে হিযাম এবং বুদায়ল ইবনে ওয়ারক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য বেরিয়ে এলো। তারা রাতের বেলা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে (মক্কার অদুরে) মাররুয জাহরান নামক স্থান পর্যন্ত এসে পৌঁছলে আরাফার ময়দানে প্রজ্বলিত আলোর মত অসংখ্য আগুন দেখতে পেল। আবু সুফিয়ান (আশ্চর্যান্বিত হয়ে) বলে উঠল, এ সব কিসের আলো? ঠিক যেন আরাফার ময়দানে প্রজ্বলিত আলোর মত (অসংখ্য বিস্তৃত)। বুদায়ল ইবনে ওয়ারকা উত্তরে বললেন, এগুলো আমর গোত্রের (চুলার) আলো। আবু সুফিয়ান বলল, আমর গোত্রের লোক সংখ্যা এ অপেক্ষা অনেক কম।
ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর কয়েকজন সামরিক প্রহরী তাদেরকে দেখে ফেলল এবং কাছে গিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর কাছে নিয়ে এলো। এ সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর তিনি [রাসূলুল্লাহ (ﷺ)] যখন (সেনাবাহিনী সহ মক্কা নগরীর দিকে) রওয়ানা হলেন তখন আব্বাস (রাযিঃ)- কে বললেন, আবু সুফিয়ানকে পথের একটি সংকীর্ণ জায়গায় (পাহাড়ের কোণে) দাঁড় করাবে, যেন সে মুসলমানদের সমগ্র সেনাদলটি দেখতে পায়। তাই আব্বাস (রাযিঃ) তাকে যথাস্থানে থামিয়ে রাখলেন। আর নবী কারীম (ﷺ)- এর সাথে আগমনকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে খণ্ডদল হয়ে আবু সুফিয়ানের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করে যেতে লাগল।
প্রথমে একটি দল অতিক্রম করে গেল। আবু সুফিয়ান বললেন, হে আব্বাস (রাযিঃ), এরা কারা? আব্বাস (রাযিঃ) বললেন, এরা গিফার গোত্রের লোক। আবু সুফিয়ান বললেন, আমার এবং গিফার গোত্রের মধ্যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল না। এরপর জুহায়না গোত্রের লোকেরা অতিক্রম করে গেলেন, আবু সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সা‘দ ইবনে হুযায়ম গোত্র অতিক্রম করল, তখনো আবু সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সুলায়ম গোত্র অতিক্রম করলেও আবু সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। অবশেষে একটি বিরাট বাহিনী তার সামনে এলো যে, এত বিরাট বাহিনী এ সময় তিনি আর দেখেননি। তাই (আশ্চর্য হয়ে) জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? আব্বাস (রাযিঃ) উত্তর দিলেন, এরাই (মদীনার) আনসারবৃন্দ। সা‘দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) তাঁদের দলপতি। তাঁর হাতেই রয়েছে তাঁদের পতাকা। (অতিক্রমকালে) সা‘দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) বললেন, হে আবু সুফিয়ান! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কা‘বার অভ্যন্তরে রক্তপাত হালাল হওয়ার দিন। আবু সুফিয়ান বললেন, হে আব্বাস! আজ হারাম ও তার অধিবাসীদের প্রতি তোমাদের করুণা প্রদর্শনেরও কত উত্তম দিন।
তারপর আরেকটি সেনাদল আসল। সংখ্যাগত দিক থেকে এটি ছিল সবচেয়ে ছোট দল। আর এদের মধ্যেই ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ। যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাযিঃ)- এর হাতে ছিল নবী কারীম (ﷺ)- এর ঝাণ্ডা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আবু সুফিয়ানের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন আবু সুফিয়ান বললেন, সা‘দ ইবনে উবাদা কি বলছে আপনি তা কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে কি বলেছে? আবু সুফিয়ান বললেন, সে এ রকম এ রকম বলেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সা‘দ ঠিক বলেনি বরং আজ এমন একটি দিন যে দিন আল্লাহ্ কা‘বাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কা‘বাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, (মক্কা নগরীতে পৌঁছে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাজুন নামক স্থানে তাঁর পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দেন। বর্ণনাকারী উরওয়া, নাফি, জুবাইর ইবনে মুতঈম আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যুবাইর ইবনে আওয়াম (রাযিঃ)- কে (মক্কা বিজয়ের পর একদা) বললেন, হে আবু আব্দুল্লাহ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে এ জায়গায়ই পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উরওয়া (রহঃ) আরো বলেন, সে দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে মক্কার উঁচু এলাকা কাঁধার দিক থেকে প্রবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর নবী কারীম (ﷺ) (নিম্ন এলাকা) কুদার দিক থেকে প্রবেশ করেছিলেন। সেদিন খালিদ ইবনে ওয়ালীদের অশ্বারোহী সৈন্যদের মধ্য থেকে হুবায়শ ইবনুল আশআর এবং করয ইবনে জাবির ফিহরী (রাযিঃ)-এ দু’জন শহীদ হয়েছিলেন।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন