আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং: ৩৬৩০
আন্তর্জতিক নং: ৩৯১১

পরিচ্ছেদঃ ২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।

৩৬৩০। মুহাম্মাদ (রাহঃ) .... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) যখন মদীনায় এলেন তখন উটের পিঠে আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর পেছনে ছিলেন। আবু বকর (রাযিঃ) ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও পরিচিত। আর নবী কারীম (ﷺ) ছিলেন (দেখতে) জাওয়ান ও অপরিচিত তখন বর্ণনাকারী বলেন, যখন আবু বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাত হত, সে জিজ্ঞাসা করত হে আবু বকর (রাযিঃ) তোমার সম্মুখে বসা ঐ ব্যক্তি কে? আবু বকর (রাযিঃ) বলতেন তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারণ পথ মনে করত এবং তিনি (আবু বকর) সত্যপথ উদ্দেশ্য করতেন। তারপর একবার আবু বকর (রাযিঃ) পিছনে তাকিয়ে হঠাৎ দেখতে পেলেন একজন অশ্বারোহী তাঁদের প্রায় নিকটে এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে একজন অশ্বারোহী আমাদের পিছনে প্রায় নিকটে পৌঁছে গেছে।
তখন নবী কারীম (ﷺ) পিছনের দিকে তাকিয়ে দুআ করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণকারী।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনার হারারার একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ এবং মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নবী কারীম (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) উটে আরোহণ করলেন আর আনসারগণ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহর নবী এসেছেন, আল্লাহর নবী এসেছেন, লোকজন উচু যায়গায় উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নবী এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবু আইয়ুব (রাযিঃ)- এর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন।
আবু আইয়ুব (রাযিঃ) ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নবী কারীম (ﷺ)- এর খেদমতে হাযির হলেন এবং নবী কারীম (ﷺ)- এর কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবু আইয়ুব (রাযিঃ) বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ! এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা কর। তিনি বললেন আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী।
যখন নবী কারীম (ﷺ) তাঁর বাড়ী আসলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী সম্প্রদায় জানে যে, আমি তাদের সর্দার এবং আমি তাঁদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি একথাটা জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুণ, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নবী কারীম (ﷺ) (ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর, তিনি ছাড়া মা‘বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমি সত্য রাসূল। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানি না। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল, আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারে না।
নবী কারীম (ﷺ) আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নবী কারীম (ﷺ) বললেন, হে ইবনে সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন মা‘বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো তিনি সত্য রাসুল, হোক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী কারীম (ﷺ) তাদেরকে বের করে দিলেন।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন