আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১০৮১
৪৯৭. অনুচ্ছেদঃ ঘরের ভিতরের লোককে সালাম দেওয়া
১০৮১. হযরত আবু মুসা (রাযিঃ) বলেনঃ একদা আমি হযরত উমর (রাযিঃ)-এর কাছে হাযির হইবার জন্য তিন তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করিলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হইল না। আমি ফিরিয়া আসিয়া পড়িলে তিনি আমাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন এবং (আমি তাঁহার দরবারে উপস্থিত হইলে) বলিলেন, হে আব্দুল্লাহ্! আমার দরজায় দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করা তোমার জন্য যেমন কষ্টকর ঠেকিয়াছে, মনে রাখিও, ঠিক তেমনি তোমার দরজায় দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করাও লোকদের জন্য কষ্টকর ঠেকে। আমি বলিলাম (ঠিক তাহা নহে) বরং আমি তিন তিনবার করিয়া আপনার অনুমতি প্রার্থনা করিয়াও অনুমতি না পাইয়া, অগত্যা ফিরিয়া আসিয়াছি আর আমাদিগকে এরূপ নির্দেশই দেওয়া হইয়াছে। তিনি বলিলেনঃ এমন বিধানের কথা তুমি কাহার নিকট হইতে শুনিয়াছ ? আমি বলিলাম, স্বয়ং নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট হইতে শুনিয়াছি। তিনি বলিলেন, তুমি কি হযরত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট হইতে এমন একটি কথা শুনিলে, যাহা আমি শুনিতে পাইলাম না? যদি তুমি উহার স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপিত করিতে না পার, তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই তোমাকে প্রদান করিব। আমি তখন (প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে) বাহির হইয়া পড়িলাম এবং মসজিদে উপবিষ্ট কয়েকজন আনসারের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিলাম (যে, তাঁহারা রাসূলুল্লাহ্ প্রদত্ত এই বিধান সম্পর্কে অবগত আছেন কিনা?) তাঁহারা বলিলেনঃ এ ব্যাপারে কি কাহারও সন্দেহ্ থাকিতে পারে ? তখন আমি তাঁহাদিগকে উমর (রাযিঃ) যাহা বলিয়াছেন, তাহা অবগত করিলাম। তাঁহারা বলিলেন, আমাদের সর্বকনিষ্ঠজনই আপনার সঙ্গে যাইবেন। তখন আবু সাঈদ খুদ্রী (রাযিঃ) অথবা আবু মাসউদ (রাযিঃ) আমার সঙ্গে উমরের নিকট উপস্থিত হইয়া (নিম্নলিখিত ঘটনাটি) বর্ণনা করেনঃ
একদা আমরা নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে বাহির হইলাম। তিনি সাদ ইব্ন উবাদার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হইয়া তথায় গিয়া উপনীত হন। তিনি তাঁহাকে (সা’দকে বাহির বাটী হইতে) সালাম দিলেন, কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার সালাম দিলেন, তবুও অনুমতি পাওয়া গেল না। অবশেষে তিনি বলিলেনঃ আমাদের দায়িত্ব আমরা সম্পন্ন করিলাম। অতঃপর তিনি ফিরিয়া যাইতে লাগিলেন। এমন সময় সা’দ (রাযিঃ) পিছন হইতে আসিয়া তাঁহার সহিত মিলিত হইয়া বলিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যে পবিত্র সত্তা আপনাকে সত্য নবী করিয়া প্রেরণ করিয়াছেন, তাঁহার কসম, আপনি যতবারই সালাম করিয়াছেন, প্রত্যেকবারই আমি তাহা শুনিয়াছি এবং সাথে সাথে উহার জবাবও (চুপি চুপি) দিয়াছি। কিন্তু আপনার পাক জবান হইতে আমার ও আমার গৃহবাসীদের প্রতি বেশী সালাম বর্ষিত হউক, ইহাই ছিল আমার কাম্য। (তাই ইচ্ছা করিয়াই সশব্দে উত্তর দেই নাই, যেন আপনি বারবার সালাম দেন।)
অতঃপর আবু মুসা (রাযিঃ) বলিলেনঃ কসম আল্লাহ্র, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর হাদীসের ব্যাপারে আমি অবশ্যই বিশ্বস্ত ! ইহাতে হযরত উমর (রাযিঃ) বলিলেনঃ সত্য বটে, তবে আমি ইহার প্রমাণ সংগ্রহ করিতে চাহিয়াছিলাম।
একদা আমরা নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে বাহির হইলাম। তিনি সাদ ইব্ন উবাদার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হইয়া তথায় গিয়া উপনীত হন। তিনি তাঁহাকে (সা’দকে বাহির বাটী হইতে) সালাম দিলেন, কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার সালাম দিলেন, তবুও অনুমতি পাওয়া গেল না। অবশেষে তিনি বলিলেনঃ আমাদের দায়িত্ব আমরা সম্পন্ন করিলাম। অতঃপর তিনি ফিরিয়া যাইতে লাগিলেন। এমন সময় সা’দ (রাযিঃ) পিছন হইতে আসিয়া তাঁহার সহিত মিলিত হইয়া বলিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যে পবিত্র সত্তা আপনাকে সত্য নবী করিয়া প্রেরণ করিয়াছেন, তাঁহার কসম, আপনি যতবারই সালাম করিয়াছেন, প্রত্যেকবারই আমি তাহা শুনিয়াছি এবং সাথে সাথে উহার জবাবও (চুপি চুপি) দিয়াছি। কিন্তু আপনার পাক জবান হইতে আমার ও আমার গৃহবাসীদের প্রতি বেশী সালাম বর্ষিত হউক, ইহাই ছিল আমার কাম্য। (তাই ইচ্ছা করিয়াই সশব্দে উত্তর দেই নাই, যেন আপনি বারবার সালাম দেন।)
অতঃপর আবু মুসা (রাযিঃ) বলিলেনঃ কসম আল্লাহ্র, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর হাদীসের ব্যাপারে আমি অবশ্যই বিশ্বস্ত ! ইহাতে হযরত উমর (রাযিঃ) বলিলেনঃ সত্য বটে, তবে আমি ইহার প্রমাণ সংগ্রহ করিতে চাহিয়াছিলাম।
بَابُ إِذَا سَلَّمَ الرَّجُلُ عَلَى الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ صَالِحٍ قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، عَنْ خَالِدِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِلاَلٍ، عَنْ مَرْوَانَ بْنِ عُثْمَانَ، أَنَّ عُبَيْدَ بْنَ عُمَيْرٍ أَخْبَرَهُ، عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: اسْتَأْذَنْتُ عَلَى عُمَرَ، فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي ثَلاَثًا، فَأَدْبَرْتُ، فَأَرْسَلَ إِلَيَّ فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللهِ، اشْتَدَّ عَلَيْكَ أَنْ تُحْتَبَسَ عَلَى بَابِي؟ اعْلَمْ أَنَّ النَّاسَ كَذَلِكَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِمْ أَنْ يُحْتَبَسُوا عَلَى بَابِكَ، فَقُلْتُ: بَلِ اسْتَأْذَنْتُ عَلَيْكَ ثَلاَثًا، فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي، فَرَجَعْتُ، فَقَالَ: مِمَّنْ سَمِعْتَ هَذَا؟ فَقُلْتُ: سَمِعْتُهُ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: أَسَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَا لَمْ نَسْمَعْ؟ لَئِنْ لَمْ تَأْتِنِي عَلَى هَذَا بِبَيِّنَةٍ لَأَجْعَلَنَّكَ نَكَالاً، فَخَرَجْتُ حَتَّى أَتَيْتُ نَفَرًا مِنَ الأَنْصَارِ جُلُوسًا فِي الْمَسْجِدِ فَسَأَلْتُهُمْ، فَقَالُوا: أَوَيَشُكُّ فِي هَذَا أَحَدٌ؟ فَأَخْبَرْتُهُمْ مَا قَالَ عُمَرُ، فَقَالُوا: لاَ يَقُومُ مَعَكَ إِلاَّ أَصْغَرُنَا، فَقَامَ مَعِي أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ، أَوْ أَبُو مَسْعُودٍ، إِلَى عُمَرَ، فَقَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يُرِيدُ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ، حَتَّى أَتَاهُ فَسَلَّمَ، فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ، ثُمَّ سَلَّمَ الثَّانِيَةَ، ثُمَّ الثَّالِثَةَ، فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ، فَقَالَ: قَضَيْنَا مَا عَلَيْنَا، ثُمَّ رَجَعَ، فَأَدْرَكَهُ سَعْدٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا سَلَّمْتَ مِنْ مَرَّةٍ إِلاَّ وَأَنَا أَسْمَعُ، وَأَرُدُّ عَلَيْكَ، وَلَكِنْ أَحْبَبْتُ أَنْ تُكْثِرَ مِنَ السَّلاَمِ عَلَيَّ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِي، فَقَالَ أَبُو مُوسَى: وَاللَّهِ إِنْ كُنْتُ لَأَمِينًا عَلَى حَدِيثِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: أَجَلْ، وَلَكِنْ أَحْبَبْتُ أَنْ أَسْتَثْبِتَ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।
যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।
খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।
খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
