আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬- তায়াম্মুমের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৪৪
২৩৮। পাক মাটি মুসলিমদের উযুর পানির স্থলবর্তী। পবিত্রতার জন্য পানির পরিবর্তে এটাই যথেষ্ট।
হাসান (রাহঃ) বলেনঃ হাদস না হওয়া পর্যন্ত তাঁর জন্য তায়াম্মুমই যথেষ্ট।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) তায়াম্মুম করে ইমামতি করেছেন।
ইয়াহয়া ইবনে সা’ঈদ (রাহঃ) বলেনঃ লোনা ভূমিতে নামায আদায় করা বা তাতে তায়াম্মুম করায় কোন বাধা নেই।
হাসান (রাহঃ) বলেনঃ হাদস না হওয়া পর্যন্ত তাঁর জন্য তায়াম্মুমই যথেষ্ট।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) তায়াম্মুম করে ইমামতি করেছেন।
ইয়াহয়া ইবনে সা’ঈদ (রাহঃ) বলেনঃ লোনা ভূমিতে নামায আদায় করা বা তাতে তায়াম্মুম করায় কোন বাধা নেই।
৩৩৭। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... ইমরান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা নবী (ﷺ) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। আমরা রাতে চলতে চলতে শেষরাতে এক স্থনে ঘুমিয়ে পড়লাম। মুসাফিরের জন্য এর চাইতে মধুর ঘুম আর হতে পারে না। (আমরা এমন ঘোর নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলাম যে,) সূর্যের তাপ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের জাগাতে পারেনি। সর্বপ্রথম জাগলেন অমুক, তারপর অমুক, তারপর অমুক। (রাবী) আবু রাজা’ (রাহঃ) তাঁদের সবারই নাম নিয়েছিলেন কিন্তু আওফ (রাহঃ) তাঁদের নাম মনে রাখতে পারেন নি। চতুর্থবারে জেগে ওঠা ব্যক্তি ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ)। নবী (ﷺ) ঘুমালে আমরা কেউ তাঁকে জাগাতাম না, যতক্ষণ না তিনি নিজেই জেগে উঠতেন। কারণ নিদ্রাবস্থায় তাঁর উপর কি অবতীর্ণ হচ্ছে তা তো আমাদের জানা নেই।
উমর (রাযিঃ) জেগে যখন মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি—উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুরু করলেন। তিনি ক্রমাগত উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকলেন। এমন কি তাঁর শব্দে নবী (ﷺ) জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাঁর কাছে ওযর পেশ করলো। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই বা বললেনঃ কোন ক্ষতি হবে না। এখান থেকে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে থামলেন। উযুর পানি আনালেন এবং উযু করলেন। নামাযের আযান দেওয়া হল। তিনি লোকদের নিয়ে নামায আদায় করলেন। নামায শেষ করে দেখলেন, এক ব্যক্তি পৃথক দাড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে নামায আদায় করেন নি। নবী (ﷺ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে অমুক! তোমাকে লোকদের সাথে নামায আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেনঃ আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে। অথচ পানি নেই। তিনি বললেনঃ পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
নবী (ﷺ) পুনরায় সফর শুরু করলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট জানালো। তিনি অবতরণ করলেন, তারপর অমুক ব্যক্তিকে ডাকলেন। (রাবী) আবু রাজা’ (রাহঃ) তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আওফ (রাহঃ) তা ভুলে গিয়েছেন। তিনি আলী (রাযিঃ)-কেও ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুঁজে আনতে বললেন। তাঁরা পানির খোঁজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেনঃ পানি কোথায়? সে বললোঃ গতকাল এ সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার গোত্র পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেনঃ এখন আমাদের সঙ্গে চলো। সে বললোঃ কোথায়? তাঁরা বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট। সে বললঃ সেই লোকটির কাছে যাকে সাবি’ (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা, এখন চল। তাঁরা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।
ইমরান (রাযিঃ) বলেনঃ লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তাঁর উট থেকে নামালেন। তারপর নবী (ﷺ) একটি পাত্র আনতে বললেন এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তাতে পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর ঘোষণা দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে যে ব্যক্তির গোসলের দরকার ছিল, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে নবী (ﷺ) বললেনঃ এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা দাড়িয়ে দেখছিল যে তাঁর পানি নিয়ে কী করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তাঁর থেকে পানি নেয়া শেষ হল তখন আমাদের মনে হল, মশকগুলো পূর্বাপেক্ষা অধিক ভর্তি।
তারপর নবী (ﷺ) বললেনঃ মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকেরা মহিলার জন্য আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করলেন, তখন তা একটা কাপড়ে বেধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তাঁর সামনে কাপড়ে বাঁধা গাঁঠরিটি রেখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি জান যে, আমরা তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তা’আলাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন।
এরপর সে তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে গেল। তাঁর বেশ দেরি হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, হে অমুক! তোমার এত দেরি হল কেন? উত্তরে সে বললো, একটা আশ্চার্যজনক ঘটনা! দু’জন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁরা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যকে সাবি’ বলা হয়। আর সেখানে সে এসব করল। এ বলে সে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে ইশারা করে বলল, আল্লাহর কসম! সে এ দু’টির মধ্যে সবচাইতে বড় জাদুকর, নয় তো সে বাস্তবিকই আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ওই মহিলার গোত্রের আশপাশের মুশরিকদের উপর হামলা করতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোন ক্ষতি করতেন না। একদিন মহিলা নিজের গোত্রকে বললঃ আমার মনে হয় তারা ইচ্ছা করে তোমাদের নিষ্কৃতি দিচ্ছে। এ সব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তাঁরা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিল এবং ইসলাম দাখিল হয়ে গেল।
আবু আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেনঃ صَبَأَ শব্দের অর্থ নিজের দ্বীন ছেড়ে অন্যের দ্বীন গ্রহণ করা। আবুল আলিয়া (রাহঃ) বলেনঃ صابئين হচ্ছে আহলে কিতাবের একটা দল, যারা যবূর কিতাব পড়ে থাকে। أصب শব্দের অর্থ ঝুকে পড়া।
উমর (রাযিঃ) জেগে যখন মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি—উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুরু করলেন। তিনি ক্রমাগত উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকলেন। এমন কি তাঁর শব্দে নবী (ﷺ) জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাঁর কাছে ওযর পেশ করলো। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই বা বললেনঃ কোন ক্ষতি হবে না। এখান থেকে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে থামলেন। উযুর পানি আনালেন এবং উযু করলেন। নামাযের আযান দেওয়া হল। তিনি লোকদের নিয়ে নামায আদায় করলেন। নামায শেষ করে দেখলেন, এক ব্যক্তি পৃথক দাড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে নামায আদায় করেন নি। নবী (ﷺ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে অমুক! তোমাকে লোকদের সাথে নামায আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেনঃ আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে। অথচ পানি নেই। তিনি বললেনঃ পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
নবী (ﷺ) পুনরায় সফর শুরু করলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট জানালো। তিনি অবতরণ করলেন, তারপর অমুক ব্যক্তিকে ডাকলেন। (রাবী) আবু রাজা’ (রাহঃ) তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আওফ (রাহঃ) তা ভুলে গিয়েছেন। তিনি আলী (রাযিঃ)-কেও ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুঁজে আনতে বললেন। তাঁরা পানির খোঁজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেনঃ পানি কোথায়? সে বললোঃ গতকাল এ সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার গোত্র পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেনঃ এখন আমাদের সঙ্গে চলো। সে বললোঃ কোথায়? তাঁরা বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট। সে বললঃ সেই লোকটির কাছে যাকে সাবি’ (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা, এখন চল। তাঁরা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।
ইমরান (রাযিঃ) বলেনঃ লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তাঁর উট থেকে নামালেন। তারপর নবী (ﷺ) একটি পাত্র আনতে বললেন এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তাতে পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর ঘোষণা দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে যে ব্যক্তির গোসলের দরকার ছিল, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে নবী (ﷺ) বললেনঃ এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা দাড়িয়ে দেখছিল যে তাঁর পানি নিয়ে কী করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তাঁর থেকে পানি নেয়া শেষ হল তখন আমাদের মনে হল, মশকগুলো পূর্বাপেক্ষা অধিক ভর্তি।
তারপর নবী (ﷺ) বললেনঃ মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকেরা মহিলার জন্য আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করলেন, তখন তা একটা কাপড়ে বেধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তাঁর সামনে কাপড়ে বাঁধা গাঁঠরিটি রেখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি জান যে, আমরা তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তা’আলাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন।
এরপর সে তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে গেল। তাঁর বেশ দেরি হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, হে অমুক! তোমার এত দেরি হল কেন? উত্তরে সে বললো, একটা আশ্চার্যজনক ঘটনা! দু’জন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁরা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যকে সাবি’ বলা হয়। আর সেখানে সে এসব করল। এ বলে সে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে ইশারা করে বলল, আল্লাহর কসম! সে এ দু’টির মধ্যে সবচাইতে বড় জাদুকর, নয় তো সে বাস্তবিকই আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ওই মহিলার গোত্রের আশপাশের মুশরিকদের উপর হামলা করতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোন ক্ষতি করতেন না। একদিন মহিলা নিজের গোত্রকে বললঃ আমার মনে হয় তারা ইচ্ছা করে তোমাদের নিষ্কৃতি দিচ্ছে। এ সব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তাঁরা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিল এবং ইসলাম দাখিল হয়ে গেল।
আবু আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেনঃ صَبَأَ শব্দের অর্থ নিজের দ্বীন ছেড়ে অন্যের দ্বীন গ্রহণ করা। আবুল আলিয়া (রাহঃ) বলেনঃ صابئين হচ্ছে আহলে কিতাবের একটা দল, যারা যবূর কিতাব পড়ে থাকে। أصب শব্দের অর্থ ঝুকে পড়া।
