আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

১৫. শাসনকার্য পরিচালনা ও আদালত-বিচার অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৫৩
আন্তর্জাতিক নং: ১৩৫৩
কোন ব্যক্তি প্রতিবেশীর দেওয়ালে তার ঘরের কড়িকাঠ স্থাপন করলে।
১৩৫৭. সাঈদ ইবনে আব্দুর রহমান (রাহঃ) ....... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কারো প্রতিবেশী যদি তার ঘরের কড়িকাঠ তোমাদের দেওয়ালে স্থাপন করার অনুমতি চায় তবে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হাদীসটি বর্ণনা করার সময় উপস্থিত লোকেরা তাদের মাথা নামিয়ে ফেলে। তিনি তখন বললেন, তোমাদের এ থেকে বিমুখ দেখছি কেন? আল্লাহর কসম, তোমাদের কাধের মাঝে আমি অবশ্যই তা ছুড়ে দিব। - ইবনে মাজাহ ২৩৩৫, নাসাঈ

এই বিষয়ে ইবনে আব্বাস ও মুজাম্মি ইবনে জারিয়া (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। কতক আলিম এতদনুসারে আমল করেছেন। এ হল ইমাম শাফিঈ (রাহঃ)-এর অভিমত। মালিক ইবনে আনাস (রাহঃ) সহ কতক আলিম বলেন, যে কেউ স্বীয় দেওয়ালে কড়িকাঠ স্থাপন করতে তার প্রতিবেশীকে নিষেধ করতে পারবে। প্রথম অভিমতটি অধিকতর সহীহ।
باب مَا جَاءَ فِي الرَّجُلِ يَضَعُ عَلَى حَائِطِ جَارِهِ خَشَبًا
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ سَمِعْتُهُ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدَكُمْ جَارُهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ فَلاَ يَمْنَعْهُ " . فَلَمَّا حَدَّثَ أَبُو هُرَيْرَةَ طَأْطَئُوا رُءُوسَهُمْ فَقَالَ مَا لِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ وَاللَّهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَمُجَمِّعِ بْنِ جَارِيَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ وَبِهِ يَقُولُ الشَّافِعِيُّ . وَرُوِيَ عَنْ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْهُمْ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ قَالُوا لَهُ أَنْ يَمْنَعَ جَارَهُ أَنْ يَضَعَ خَشَبَهُ فِي جِدَارِهِ . وَالْقَوْلُ الأَوَّلُ أَصَحُّ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশীর বাড়ির মাঝখানে যদি একটি প্রাচীর থাকে এবং সেটির মালিক তাদের একজন হয় আর সেই প্রাচীরে অন্য প্রতিবেশী নিজ ঘরের আড়কাঠ লাগাতে চায়, তবে মালিকের তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। প্রতিবেশী হিসেবে এতটুকু ছাড় তাকে দেওয়া উচিত। একজনের প্রাচীরে অন্যজন আড়কাঠ তো তখনই লাগাতে চায়, যখন নিজের প্রাচীর তৈরির মত সামর্থ্য না থাকে। এ অবস্থায় তাকে যদি নিজ প্রাচীরে আড়কাঠ লাগাতে বাধা দেওয়া হয়, তবে তার পক্ষে ঘর তৈরিই কঠিন হয়ে যাবে। এতটা নিকট প্রতিবেশীকে এরকম সংকটে ফেলা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।

অবশ্য মালিকের নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যের হস্তক্ষেপে বাধা দেওয়ার তো অধিকার থাকেই। আর বাধা দেওয়া অবস্থায় সেটি ব্যবহার করাও উচিত নয়। কেননা অন্যের মালিকানাধীন বস্তু তার অসম্মতিতে ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আইনের কথা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আখলাক ও মহানুভবতার উপর চলতে উৎসাহিত করেছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। মহানুভবতা প্রদর্শনই ভ্রাতৃত্বের দাবি। সে দাবি অনুযায়ী নিজ প্রাচীর নিকটতম প্রতিবেশীকে তার ঠেকা অবস্থায় ব্যবহার করতে দেওয়াই উচিত, বাধা দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই এ হাদীছে বলা হয়েছে।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. যখন এ হাদীছটি বর্ণনা করছিলেন, তখন তিনি মদীনা মুনাউওয়ারার ভারপ্রাপ্ত শাসক। শ্রোতাদের কাছে হয়তো হাদীছটি নতুন মনে হচ্ছিল। একজনের প্রাচীর আরেকজন ব্যবহার করবে আর তাতে বাধা দেওয়া যাবে না, এ বিষয়টা তাদের কাছে হয়তো অদ্ভুত লাগছিল। তাদের হাবভাব দেখে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বুঝতে পারছিলেন তারা বুঝি তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করছে না। তাই এই ধমক দিলেন যে, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? তারপর বললেন- والله لأرمين بها بين أكتافكم (আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব)। দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করার কথাটি একটি বাগ্ধারা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- এটি আমি তোমাদের মধ্যে অবশ্যই প্রকাশ করব। কাউকে সজাগ ও সচেতন করার জন্য তার দুই কাঁধের মাঝখানে আঘাত করা হয়। সুতরাং হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. এ কথা বলে তাদেরকে সজাগ করতে চেয়েছেন যে, আমি তো তোমাদেরকে হাদীছ শোনাচ্ছি। এটা আমার নিজের কথা নয়। কাজেই তোমাদের উচিত খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া।

ইমাম খাত্তাবী রহ. বাক্যটির অর্থ করেছেন- তোমরা যদি এ নির্দেশ খুশিমনে গ্রহণ না কর ও সন্তুষ্টচিত্তে এর উপর আমল না কর, তবে আমি তোমাদেরকে এটা মানতে বাধ্য করব এবং আড়কাঠ দেয়ালের পরিবর্তে তোমাদের কাঁধের উপর লাগিয়ে দেব। এটা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে একটি ধমক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রতিবেশীর প্রতি মহত্ত্ব প্রদর্শনের শিক্ষা পাওয়া যায়।

খ. প্রতিবেশীর সংকট ও অভাব-অনটন অবস্থায় সচ্ছল প্রতিবেশীর উচিত তার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখা।

গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত হাদীছের শিক্ষা খুশিমনে গ্রহণ করা।

ঘ. দীনের কোনও শিক্ষাগ্রহণে কেউ দ্বিধাভাব প্রকাশ করলে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি প্রয়োজনে তাকে ধমক দিতে পারে এবং তাকে তা মানতে বাধ্য করতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন