কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৭৫৮
আন্তর্জাতিক নং: ৪৮৩৩
১৯. কার সোহবতে বসা উচিত - সে সম্পর্কে।
৪৭৫৮. ইবনে বাশশার (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ ব্যক্তি তাঁর বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। কাজেই, তোমাদের দেখা উচিত, কার সাথে বন্ধুত্ব করছো।
باب مَنْ يُؤْمَرُ أَنْ يُجَالَسَ
حَدَّثَنَا ابْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ، وَأَبُو دَاوُدَ قَالاَ حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنِي مُوسَى بْنُ وَرْدَانَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির প্রথম বাক্যে জানানো হয়েছে যে, এক বন্ধুর উপর অপর বন্ধুর বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও আমল-আখলাকের প্রভাব পড়ে থাকে। বন্ধু যদি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের আকীদা-বিশ্বাসে আস্থাশীল থাকে, তবে তার সঙ্গে চলাফেরা করতে করতে একপর্যায়ে অপর বন্ধুও সেই আকীদা-বিশ্বাস গ্রহণ করে নেয়। আবার সে যদি বিদ'আতপন্থী হয়, তবে তার দেখাদেখি অপর বন্ধুও বিদ'আতের শিকার হয়ে যায়। নামাযী ব্যক্তির বন্ধুও একপর্যায়ে নামাযী হয়ে ওঠে। সৎলোকের সঙ্গে বন্ধুত্বকারীও ক্রমান্বয়ে সজীবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এমন বহু দেখা গেছে যে, দীনদারদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে করতে বদ্দীন লোক দীনদার হয়ে গেছে, আবার ধর্মবিরোধী ও নাস্তিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার পরিণামে দীনদার ব্যক্তিও ধর্মকর্ম ছেড়ে দিয়েছে। এটি একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা। এটি পরীক্ষিত সত্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নীতিবাক্যে সে সত্যের প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তারপর তিনি সাবধান করেন-
فلينظر احدكم من يخالل (কাজেই তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ রাখে, সে কাকে বন্ধ বানাচ্ছে)। অর্থাৎ বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। এমন লোককেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে হবে, যার দীনদারী সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা থাকে, যার দ্বারা নিজের দীন ও ঈমান এবং আমল-আখলাকে উন্নতি লাভের আশা থাকে। পক্ষান্তরে যার ঈমান- আমল সন্তোষজনক নয়, যার দ্বারা নিজের আমল-আখলাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তার সঙ্গে কিছুতেই বন্ধুত্ব করা যাবে না। এরূপ ব্যক্তির বন্ধুত্ব দুনিয়া ও আখেরাতের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে এ ধরনের বন্ধুত্ব মানুষের বিপথগামিতার একটি বড় কারণ। একশ্রেণীর জাহান্নামী এরূপ বন্ধুত্বের কারণে কেমন আক্ষেপ করবে, কুরআন মাজীদে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে-
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا (27) يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا (28) لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا
‘এবং যেদিন জালিম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ ধরতাম! হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে তো উপদেশ এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে (ওই বন্ধু) আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। আর শয়তান তো (এমনই চরিত্রের যে, সময়কালে সে) মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে চলে যায়।২৫০
হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর উপদেশসমূহের মধ্যে আছে-
واحتفظ من خليلك إلا الأمين، وإن الأمين ليس من القَوْم أَحَدٌ يَعْدِلُه ، ولا أمين إلا مَنْ خَشِيَ الله عَزَّ وَجَلَّ، وَلا تَصْحَب الْفَاجِرَ كَي يَحْمِلَكَ عَلَى الْفُجُور
‘আমানতদার নয় এমন বন্ধু হতে বেঁচে থাক। কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে আমানতদার ব্যক্তির সমতুল্য আর কেউ হতে পারে না। প্রকৃত আমানতদার কেবল সেই, যে মহান আল্লাহকে ভয় করে। কোনও পাপিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করো না, পাছে সে তোমাকেও পাপাচারে প্ররোচিত করে।২৫১
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে আল্লাহর যিকর ও স্মরণে সহযোগিতা করবে, কেবল তাকেই বন্ধু বানাবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্ল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমরা যাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে পারি তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কে? তিনি বললেন-
مَنْ يُذَكِّرُكُمُ اللهَ رُؤْيَتُهُ , وَزَادَ فِي عَمَلِكُمْ مَنْطِقُهُ , وَذَكَّرَكُمُ الْآخِرَةَ عَمَلُهُ
‘যাকে দেখাটা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যার কথা জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং যার আমল আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।২৫২
মায়মুন ইবন মিহরান রহ. বলেন, দুই ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করো না- যে ব্যক্তি হারাম খায় এবং যে ব্যক্তি বিদ'আতী কাজ করে।
হযরত লুকমান রহ.-এর উপদেশে আছে, যে ব্যক্তি মন্দ সঙ্গীর সাথে চলে, সে নিরাপদ থাকতে পারে না, আর যে ব্যক্তি সৎ সঙ্গীর সাথে চলে সে তার দ্বারা উপকৃত হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
যেহেতু এক বন্ধুর উপর অপর বন্ধুর দীন ও ঈমান এবং আখলাক-চরিত্রের প্রভাব পড়ে থাকে, তাই প্রকৃত দীনদার ও চরিত্রবান ব্যক্তিকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করা উচিত।
২৫০. সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ২৭-২৯
২৫১. শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৯৯৫
২৫২. শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০০১; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ২৪৩৭
فلينظر احدكم من يخالل (কাজেই তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ রাখে, সে কাকে বন্ধ বানাচ্ছে)। অর্থাৎ বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। এমন লোককেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে হবে, যার দীনদারী সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা থাকে, যার দ্বারা নিজের দীন ও ঈমান এবং আমল-আখলাকে উন্নতি লাভের আশা থাকে। পক্ষান্তরে যার ঈমান- আমল সন্তোষজনক নয়, যার দ্বারা নিজের আমল-আখলাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তার সঙ্গে কিছুতেই বন্ধুত্ব করা যাবে না। এরূপ ব্যক্তির বন্ধুত্ব দুনিয়া ও আখেরাতের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে এ ধরনের বন্ধুত্ব মানুষের বিপথগামিতার একটি বড় কারণ। একশ্রেণীর জাহান্নামী এরূপ বন্ধুত্বের কারণে কেমন আক্ষেপ করবে, কুরআন মাজীদে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে-
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا (27) يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا (28) لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا
‘এবং যেদিন জালিম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ ধরতাম! হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে তো উপদেশ এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে (ওই বন্ধু) আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। আর শয়তান তো (এমনই চরিত্রের যে, সময়কালে সে) মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে চলে যায়।২৫০
হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর উপদেশসমূহের মধ্যে আছে-
واحتفظ من خليلك إلا الأمين، وإن الأمين ليس من القَوْم أَحَدٌ يَعْدِلُه ، ولا أمين إلا مَنْ خَشِيَ الله عَزَّ وَجَلَّ، وَلا تَصْحَب الْفَاجِرَ كَي يَحْمِلَكَ عَلَى الْفُجُور
‘আমানতদার নয় এমন বন্ধু হতে বেঁচে থাক। কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে আমানতদার ব্যক্তির সমতুল্য আর কেউ হতে পারে না। প্রকৃত আমানতদার কেবল সেই, যে মহান আল্লাহকে ভয় করে। কোনও পাপিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করো না, পাছে সে তোমাকেও পাপাচারে প্ররোচিত করে।২৫১
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে আল্লাহর যিকর ও স্মরণে সহযোগিতা করবে, কেবল তাকেই বন্ধু বানাবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্ল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমরা যাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে পারি তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কে? তিনি বললেন-
مَنْ يُذَكِّرُكُمُ اللهَ رُؤْيَتُهُ , وَزَادَ فِي عَمَلِكُمْ مَنْطِقُهُ , وَذَكَّرَكُمُ الْآخِرَةَ عَمَلُهُ
‘যাকে দেখাটা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যার কথা জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং যার আমল আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।২৫২
মায়মুন ইবন মিহরান রহ. বলেন, দুই ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করো না- যে ব্যক্তি হারাম খায় এবং যে ব্যক্তি বিদ'আতী কাজ করে।
হযরত লুকমান রহ.-এর উপদেশে আছে, যে ব্যক্তি মন্দ সঙ্গীর সাথে চলে, সে নিরাপদ থাকতে পারে না, আর যে ব্যক্তি সৎ সঙ্গীর সাথে চলে সে তার দ্বারা উপকৃত হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
যেহেতু এক বন্ধুর উপর অপর বন্ধুর দীন ও ঈমান এবং আখলাক-চরিত্রের প্রভাব পড়ে থাকে, তাই প্রকৃত দীনদার ও চরিত্রবান ব্যক্তিকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করা উচিত।
২৫০. সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ২৭-২৯
২৫১. শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৯৯৫
২৫২. শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০০১; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ২৪৩৭
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
