কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
২৭. পোশাক-পরিচ্ছদের ইসলামী বিধান
হাদীস নং: ৪০৮৫
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৩১
৪০. চিতা বাঘের চামড়া সম্পর্কে।
৪০৮৫. আমর ইবনে উছমান (রাহঃ) .... খালিদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা মিকদাম ইবনে সা’দী কারাব (রাযিঃ), আমর ইবনে আসওয়াদ ও কিনসিরীন বংশোদ্ভূত আসাদ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি একত্রে মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রাযিঃ) এর নিকট যান। তখন মুআবিয়া (রাযিঃ) মিকদাম (রাযিঃ) কে বলেনঃ তুমি কি জান, হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) ইনতিকাল করেছেন? তখন মিকদাম (রাযিঃ) ‘‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’’ পড়েন। তখন জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেঃ আপনি কি এটা মুসীবত মনে করেন? তিনি বলেনঃ আমি কেন একে মুসীবত মনে করবো না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে (হাসান) কোলে নিয়ে বলতেনঃ হাসান আমার এবং হুসাইন আলীর। তখন আসাদ গোত্রের লোকটি বলেঃ তিনি তো এক টুকরা অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ স্বরূপ ছিলেন, যাকে আল্লাহ নিভিয়ে দিয়েছেন।
এরপর মিকদাম (রাযিঃ) বলেনঃ আজ আমি আপনাকে নারায ও অসন্তুষ্ট না করে ছাড়বো না। পরে তিনি বলেন, হে মুআবিয়া! যদি আমি সত্য বলি, তবে আপনি আমাকে মিথ্যাবাদী বলবেন। তখন মুআবিয়া (রাযিঃ) বলেন, আমি এরূপই করবো।
মিকদাম (রাযিঃ) বলেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সোনার জিনিস ব্যবহারে নিষেধ করতে শুনেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি বলেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রেশমী-বস্ত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি বলেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিংস্র জন্তুর চামড়া পরিধান করতে এবং তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।
তখন মিকদাম (রাযিঃ) বলেনঃ হে মুআবিয়া! এ সবই তো আমি আপনার ঘরে দেখতে পাচ্ছি! মুআবিয়া (রাযিঃ) বলেনঃ আমি জানি, আমি তোমার হাত থেকে রেহাই পাব না।
রাবী খালিদ (রাহঃ) বলেনঃ এরপর মুআবিয়া (রাযিঃ) মিকদাম (রাযিঃ)-কে এত পরিমাণ ধন-সম্পদ প্রদানের নির্দেশ দেন, যা তাঁর অন্য সঙ্গীদ্বয়ের জন্য দেননি এবং তাঁর পুত্রের জন্যও দুইশত দীনার প্রদান করেন। তখন মিকদাম (রাযিঃ) তাঁর সাথীদের মাঝে সব সম্পদ বন্টন করে দেন এবং আসাদ গোত্রের লোকটি কাউকে কিছু দেয়নি। এ খরব মুআবিয়া (রাযিঃ) এর কাছে পৌছলে, তিনি বলেনঃ মিকদাম (রাযিঃ), সে তো তার সম্পদকে উত্তমরূপে আগলে রাখে।
এরপর মিকদাম (রাযিঃ) বলেনঃ আজ আমি আপনাকে নারায ও অসন্তুষ্ট না করে ছাড়বো না। পরে তিনি বলেন, হে মুআবিয়া! যদি আমি সত্য বলি, তবে আপনি আমাকে মিথ্যাবাদী বলবেন। তখন মুআবিয়া (রাযিঃ) বলেন, আমি এরূপই করবো।
মিকদাম (রাযিঃ) বলেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সোনার জিনিস ব্যবহারে নিষেধ করতে শুনেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি বলেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রেশমী-বস্ত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি বলেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিংস্র জন্তুর চামড়া পরিধান করতে এবং তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।
তখন মিকদাম (রাযিঃ) বলেনঃ হে মুআবিয়া! এ সবই তো আমি আপনার ঘরে দেখতে পাচ্ছি! মুআবিয়া (রাযিঃ) বলেনঃ আমি জানি, আমি তোমার হাত থেকে রেহাই পাব না।
রাবী খালিদ (রাহঃ) বলেনঃ এরপর মুআবিয়া (রাযিঃ) মিকদাম (রাযিঃ)-কে এত পরিমাণ ধন-সম্পদ প্রদানের নির্দেশ দেন, যা তাঁর অন্য সঙ্গীদ্বয়ের জন্য দেননি এবং তাঁর পুত্রের জন্যও দুইশত দীনার প্রদান করেন। তখন মিকদাম (রাযিঃ) তাঁর সাথীদের মাঝে সব সম্পদ বন্টন করে দেন এবং আসাদ গোত্রের লোকটি কাউকে কিছু দেয়নি। এ খরব মুআবিয়া (রাযিঃ) এর কাছে পৌছলে, তিনি বলেনঃ মিকদাম (রাযিঃ), সে তো তার সম্পদকে উত্তমরূপে আগলে রাখে।
باب فِي جُلُودِ النُّمُورِ
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ بْنِ سَعِيدٍ الْحِمْصِيُّ، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، عَنْ بَحِيرٍ، عَنْ خَالِدٍ، قَالَ وَفَدَ الْمِقْدَامُ بْنُ مَعْدِيكَرِبَ وَعَمْرُو بْنُ الأَسْوَدِ وَرَجُلٌ مِنْ بَنِي أَسَدٍ مِنْ أَهْلِ قِنَّسْرِينَ إِلَى مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ لِلْمِقْدَامِ أَعَلِمْتَ أَنَّ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ تُوُفِّيَ فَرَجَّعَ الْمِقْدَامُ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ أَتَرَاهَا مُصِيبَةً قَالَ لَهُ وَلِمَ لاَ أَرَاهَا مُصِيبَةً وَقَدْ وَضَعَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حِجْرِهِ فَقَالَ " هَذَا مِنِّي وَحُسَيْنٌ مِنْ عَلِيٍّ " . فَقَالَ الأَسَدِيُّ جَمْرَةٌ أَطْفَأَهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ . قَالَ فَقَالَ الْمِقْدَامُ أَمَّا أَنَا فَلاَ أَبْرَحُ الْيَوْمَ حَتَّى أُغِيظَكَ وَأُسْمِعَكَ مَا تَكْرَهُ . ثُمَّ قَالَ يَا مُعَاوِيَةُ إِنْ أَنَا صَدَقْتُ فَصَدِّقْنِي وَإِنْ أَنَا كَذَبْتُ فَكَذِّبْنِي قَالَ أَفْعَلُ . قَالَ فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ لُبْسِ الذَّهَبِ قَالَ نَعَمْ . قَالَ فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَنْهَى عَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ قَالَ نَعَمْ . قَالَ فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ لُبْسِ جُلُودِ السِّبَاعِ وَالرُّكُوبِ عَلَيْهَا قَالَ نَعَمْ . قَالَ فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ هَذَا كُلَّهُ فِي بَيْتِكَ يَا مُعَاوِيَةُ . فَقَالَ مُعَاوِيَةُ قَدْ عَلِمْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْكَ يَا مِقْدَامُ قَالَ خَالِدٌ فَأَمَرَ لَهُ مُعَاوِيَةُ بِمَا لَمْ يَأْمُرْ لِصَاحِبَيْهِ وَفَرَضَ لاِبْنِهِ فِي الْمِائَتَيْنِ فَفَرَّقَهَا الْمِقْدَامُ فِي أَصْحَابِهِ قَالَ وَلَمْ يُعْطِ الأَسَدِيُّ أَحَدًا شَيْئًا مِمَّا أَخَذَ فَبَلَغَ ذَلِكَ مُعَاوِيَةَ فَقَالَ أَمَّا الْمِقْدَامُ فَرَجُلٌ كَرِيمٌ بَسَطَ يَدَهُ وَأَمَّا الأَسَدِيُّ فَرَجُلٌ حَسَنُ الإِمْسَاكِ لِشَيْئِهِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর চামড়াকে বিছানা বানাতে কিংবা পশুর পিঠে বিছিয়ে তার উপর সওয়ার হতে নিষেধ করা হয়েছে। সেকালে অনারবরা এটা করত। এটা এক রকম অহমিকা। বিলাসিতাও বটে। অহংকারী লোক মানুষকে দেখানোর জন্য এ জাতীয় বিলাসিতা সেকালেও করত, এখনও করে থাকে। গৌরব দেখানো ভালো নয়। বিলাসিতাও পসন্দনীয় নয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নিষেধ করে দিয়েছেন যে, তারা যেন বাঘ বা অন্য কোনও হিংস্র পশুর চামড়াকে বিছানা বানিয়ে তার উপর না বসে কিংবা তাতে সওয়ার না হয় অর্থাৎ তা দ্বারা সওয়ারীর জিন না বানায়। সারকথা একজন মুমিনের দৃষ্টি থাকবে সর্বদা আখিরাতের দিকে। কীভাবে আখিরাতের মুক্তিলাভ হতে পারে, তার যাবতীয় কাজকর্ম সে লক্ষ্যেই সম্পাদিত হবে। সে ভোগ-বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে আখিরাত থেকে উদাসীন হবে না। তার পোশাক-আশাক ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী হবে সাদামাটা। এসব বস্তু অতিরিক্ত দামি বা বিলাসিতাপূর্ণ হলে অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এগুলো মানুষের সেবক থাকে না, উল্টো মানুষ এর সেবক হয়ে যায়। এভাবে মানুষ আখিরাত থেকে উদাসীন হয়ে এসব সামগ্রী সংগ্রহ ও এর সেবাযত্নে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা কিনা মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থি এবং দুনিয়ার বস্তুসামগ্রী সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
মুমিনদের উচিত সর্বপ্রকার বিলাসসামগ্রী ও অহমিকাজনক বস্তুর ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
মুমিনদের উচিত সর্বপ্রকার বিলাসসামগ্রী ও অহমিকাজনক বস্তুর ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
