আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল

হাদীস নং: ৫৯৯৭
আন্তর্জাতিক নং: ২৪০৩-৪
৩. উসমান ইবনে আফফান (রাযিঃ) এর ফযীলত
৫৯৯৭। মুহাম্মাদ ইবনে মিসকীন ইয়ামামী (রাহঃ) ......... আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর বাড়ি থেকে উযু করে বের হয়ে এসে বলেন, আজকের দিন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে থাকব। তিনি মসজিদে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বললো, এ দিকে গিয়েছেন। আবু মুসা (রাযিঃ) লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে তার পায়ের চিহ্ন দেখে দেখে আরীস কূপে (-র বাগানে) গিয়ে পৌছলেন। আবু মুসা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি দরজায় বসলাম। এর দরজাটি ছিল কাঠের।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর প্রাকৃতিক কাজ সেরে উযু করলে আমি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আরীস কূপের উপর বসা ছিলেন অর্থাৎ তার কিনারের মধ্যে তাঁর পা দুটো নলা পর্যন্ত খুলে রেখেছিলেন এবং তা দু’পা কূপের ভেতর ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে দরজার কাছে চলে গেলাম। বললাম, আমি আজ অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দারোয়ান হবো। আবু বকর (রাযিঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলে আমি বললাম কে? তিনি বললেন, আবু বকর। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন! এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবু বকর (রাযিঃ) এসেছেন এবং অনুমতি চাচ্ছেন।

তিনি বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এগিয়ে গিয়ে আবু বকরকে বললাম, প্রবেশ করুন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আবু বকর (রাযিঃ) প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে তার ডানদিকে কূপের কিনারায় কূপে পা ঝুলিয়ে বসলেন যেমনটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করেছেন আর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা রাখলেন। এরপর আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে রেখে এসেছিলাম, তিনি উযু করছিলেন। তিনি আমার সাথে দেখা করবেন। আমি মনে করলাম, আল্লাহ তাআলা যদি তাঁর কল্যাণ চান তাহলে তাঁকে এখনই এনে দিবেন।

এমন সময় একজন মানুষ দরজা নাড়লো। বললাম, কে? উত্তর দিলো, উমর (রাযিঃ) ইবনুল খাত্তাব। বললাম, একটু অপেক্ষা করুন! পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে বললাম, উমর (রাযিঃ) এসেছেন, তিনি প্রবেশর অনুমতি চাইছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি উমর (রাযিঃ) এর কাছে এসে বললাম, অনুমতি দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। উমর (রাযিঃ) প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বামপাশের কূপের কিনারায় বসলেন এবং কূপের ভিতরে পা ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম, বললাম, আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের কল্যাণ চান তাহলে তাঁকে এনে দিবেন।

একজন লোক এসে দরজা নাড়লো। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, উসমান ইবনে আফফান। বললাম, একটু অপেক্ষা করুন! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে খবর দিলাম। তিনি বললেনঃ তাকে ঢুকতে দাও এবং আসন্ন বিপদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এসে বললাম, প্রবেশ করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে একটি আসন্ন বিপদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। রাবী বলেন, তিনি [উসমান (রাযিঃ)] প্রবেশ করে দেখলেন কূপের একপাশ ভরে গেছে। তিনি তাঁদের মুখোমুখি হয়ে কূপের অন্যপাশে বসলেন।

শুরাইক (রাহঃ) বলেনঃ সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব (রাহঃ) বলেন, আমি এ বৈঠকের ব্যাখ্যা করলাম যে, এ হচ্ছে তাদের কবর এর অবস্থান।

আবু বকর ইবনে ইসহাক (রাহঃ) ......... আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে খুঁজতে বের হয়ে দেখলাম, তিনি মালসমুহের (বাগানের) দিকে গিয়েছেন। আমি তাঁর পিছনে গিয়ে দেখি তিনি মালে (বাগানে) ঢুকে কুয়ার চাকের উপর পা দু’টো ঝুলিয়ে বসে আছেন, তাঁর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা। এরপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। এখানে সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (রাহঃ) এর কথা ″আমি এটিকে, তাদের কবররূপে″ কথাটি নেই।
باب مِنْ فَضَائِلِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رضى الله عنه
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِسْكِينٍ الْيَمَامِيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَسَّانَ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، - وَهُوَ ابْنُ بِلاَلٍ - عَنْ شَرِيكِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، أَخْبَرَنِي أَبُو مُوسَى الأَشْعَرِيُّ، أَنَّهُ تَوَضَّأَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ خَرَجَ فَقَالَ لأَلْزَمَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلأَكُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِي هَذَا . قَالَ فَجَاءَ الْمَسْجِدَ فَسَأَلَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا خَرَجَ . وَجَّهَ هَا هُنَا - قَالَ - فَخَرَجْتُ عَلَى أَثَرِهِ أَسْأَلُ عَنْهُ حَتَّى دَخَلَ بِئْرَ أَرِيسٍ - قَالَ - فَجَلَسْتُ عِنْدَ الْبَابِ وَبَابُهَا مِنْ جَرِيدٍ حَتَّى قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَاجَتَهُ وَتَوَضَّأَ فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ قَدْ جَلَسَ عَلَى بِئْرِ أَرِيسٍ وَتَوَسَّطَ قُفَّهَا وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلاَّهُمَا فِي الْبِئْرِ - قَالَ - فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ انْصَرَفْتُ فَجَلَسْتُ عِنْدَ الْبَابِ فَقُلْتُ لأَكُونَنَّ بَوَّابَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْيَوْمَ . فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَدَفَعَ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ . فَقُلْتُ عَلَى رِسْلِكَ - قَالَ - ثُمَّ ذَهَبْتُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا أَبُو بَكْرٍ يَسْتَأْذِنُ فَقَالَ " ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ " . قَالَ فَأَقْبَلْتُ حَتَّى قُلْتُ لأَبِي بَكْرٍ ادْخُلْ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُبَشِّرُكَ بِالْجَنَّةِ - قَالَ - فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ فَجَلَسَ عَنْ يَمِينِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَعَهُ فِي الْقُفِّ وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِي الْبِئْرِ كَمَا صَنَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ وَقَدْ تَرَكْتُ أَخِي يَتَوَضَّأُ وَيَلْحَقُنِي فَقُلْتُ إِنْ يُرِدِ اللَّهُ بِفُلاَنٍ - يُرِيدُ أَخَاهُ - خَيْرًا يَأْتِ بِهِ . فَإِذَا إِنْسَانٌ يُحَرِّكُ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ . فَقُلْتُ عَلَى رِسْلِكَ . ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ هَذَا عُمَرُ يَسْتَأْذِنُ فَقَالَ " ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ " . فَجِئْتُ عُمَرَ فَقُلْتُ أَذِنَ وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْجَنَّةِ - قَالَ - فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْقُفِّ عَنْ يَسَارِهِ وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِي الْبِئْرِ ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ إِنْ يُرِدِ اللَّهُ بِفُلاَنٍ خَيْرًا - يَعْنِي أَخَاهُ - يَأْتِ بِهِ فَجَاءَ إِنْسَانٌ فَحَرَّكَ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ . فَقُلْتُ عَلَى رِسْلِكَ - قَالَ - وَجِئْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ " ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصِيبُهُ " . قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ ادْخُلْ وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصِيبُكَ - قَالَ - فَدَخَلَ فَوَجَدَ الْقُفَّ قَدْ مُلِئَ فَجَلَسَ وُجَاهَهُمْ مِنَ الشِّقِّ الآخَرِ . قَالَ شَرِيكٌ فَقَالَ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ فَأَوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ .
حَدَّثَنِيهِ أَبُو بَكْرِ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، حَدَّثَنِي شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، يَقُولُ حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى الأَشْعَرِيُّ، هَا هُنَا - وَأَشَارَ لِي سُلَيْمَانُ إِلَى مَجْلِسِ سَعِيدٍ نَاحِيَةَ الْمَقْصُورَةِ - قَالَ أَبُو مُوسَى خَرَجْتُ أُرِيدُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَوَجَدْتُهُ قَدْ سَلَكَ فِي الأَمْوَالِ فَتَبِعْتُهُ فَوَجَدْتُهُ قَدْ دَخَلَ مَالاً فَجَلَسَ فِي الْقُفِّ وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلاَّهُمَا فِي الْبِئْرِ . وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِمَعْنَى حَدِيثِ يَحْيَى بْنِ حَسَّانَ وَلَمْ يَذْكُرْ قَوْلَ سَعِيدٍ فَأَوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মক্কাবিজয়ের দিন হযরত উম্মু হানী রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন অমুসলিম এক বা দুই ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া উপলক্ষ্যে। তিনি এসে দেখেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করছেন এবং হযরত ফাতিমা রাযি. একটি কাপড় দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন। এটা গোসলের আদব। প্রকাশ্যে লোকচক্ষুর সামনে গোসল না করে আড়ালে করা শ্রেয়। যদি সতর খোলার কোনও ব্যাপার থাকে, তবে তো আড়াল করা ফরয। অন্যের সামনে সতর খোলা জায়েয নয়।

হযরত উম্মু হানী রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলেন। তিনি গোসলরত ছিলেন। এরূপ ব্যস্ততার অবস্থায় সালাম না দেওয়াই আদব। তবে বিশেষ প্রয়োজন থাকলে ভিন্ন কথা। এখানে বিশেষ প্রয়োজন ছিল।

হযরত উম্মু হানী রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহরাম নন। তা সত্ত্বেও হযরত উম্মু হানী রাযি. সালাম দিয়েছেন। ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে গায়রে মাহরামকেও সালাম দেওয়া যায়। এখানে কোনও আশঙ্কা ছিল না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গোসলরত ব্যক্তিকে প্রয়োজনে সালাম দেওয়া যেতে পারে।

খ. লোকচক্ষুর আড়ালে গোসল করা উত্তম। অবশ্য সতর খোলার কোনও ব্যাপার থাকলে আড়ালেই গোসল করা জরুরি।

গ. ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে নারী গায়রে মাহরাম পুরুষকে সালাম দিতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫৯৯৭ | মুসলিম বাংলা