আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৮৪৪৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কিভাবে নিজেকে পরিবর্তন করবো??

৩১ আগস্ট, ২০২১
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আপনার জন্য কিছু প্রবন্ধঃ

১- একনজরে একজন আদর্শ মুসলিমঃ

একজন আদর্শ মুসলিমের দিন-রাত কেমন হবে? কেমন হবে তার সকাল-সন্ধ্যা? কেমন হবে তার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রিক জীবন? একজন মুসলিমের আচরণ তার প্রভুর সাথে কেমন হবে? নিজের সাথে কেমন হবে? মা-বাবার সাথে, সন্তানদের সাথে, স্ত্রীর সাথে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে কেমন হবে? কেমন আচরণ হবে ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে?
কুরআন-সুন্নাহয় এসকল বিষয়ে যে দিকনির্দেশনা রয়েছে, সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু পেশ করা হল। যদি মাঝেমধ্যে নিজের অবস্থাকে সেই আলোকে মিলিয়ে দেখতে থাকি তাহলে আস্তে আস্তে হয়ত আমিও একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারব- ইনশাআল্লাহ।
আদর্শ মুসলিম আল্লাহর সাথে কেমন আচরণ করবেঃ
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান থাকবে এবং ঈমানের দাবিসমূহ আদায় করবে। আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকবে এবং ভালোবাসার দাবিসমূহ পালন করবে। আল্লাহর আদেশের সামনে সর্বদা শির নত করে দিবে। আল্লাহর রেযা ও সন্তুষ্টিই হবে তার জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। তাকদীরের উপর রাজি খুশি থাকবে। কোনো গোনাহ হয়ে গেলে সঙ্গেসঙ্গে ইস্তিগফার ও তাওবা করবে।
ফরয ইবাদতসমূহ যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর সকল বিধানকে শিরোধার্য করবে। ফরয নামাযের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে। নফল আদায়েও যত্নবান হবে।
রমযানের রোযা রাখবে। ইতিকাফ করার চেষ্টা করবে। বছরের অন্যান্য নফল রোযার ফযীলত লাভেও সচেষ্ট হবে।
হজ্ব ফরয হলে হজ্ব করবে। আল্লাহ তাওফিক দিলে উমরাও করবে।
আল্লাহ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বানালে যথাযথ হিসাব করে যাকাত দিবে। সাধ্যমত নফল সদকা করবে; দ্বীনের নুসরতে সম্পদ ব্যয় করবে। অভাবীর পাশে দাঁড়াবে।
কুরআনের সাথে ইলমী ও আমলী সম্পর্ক মজবুত করবে। অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করবে। কুরআনের বিধি-বিধানকে নিজের জীবনে শিরোধার্য করবে।
আল্লাহ যেসকল কাজ পছন্দ করেন তা করার চেষ্টা করবে। আল্লাহ যেসকল কাজ অপছন্দ করেন তা থেকে বিরত থাকবে। জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে।
নিজের সাথে কেমন আচরণ করবেঃ
নিজের ক্ষেত্রেও একজন আদর্শ মুসলিমের অবস্থান হবে খুবই ভারসাম্যপূর্ণ। সে জানে, তার উপর তার শরীরের হক রয়েছে। তাই নিজের শরীরের উপর সে জুলুম করে না। পানাহারের ক্ষেত্রে মান ও পরিমাণ রক্ষা করে। বিশ্রামকে পরিশ্রমের অংশ মনে করে। রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে যেমন সওয়াবের আশা করে তেমনি ঘুমিয়েও সওয়াবের আশা রাখে। নিয়মিত শরীর চর্চা করতে অলসতা করে না। যত ব্যস্ততাই থাকুক তার পোশাক-পরিচ্ছদ থাকে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি। তার শরীর, পায়ের পাতা, নখ, চুল ও দাড়ি থাকে বিন্যস্ত।
শুধু শরীরই নয়, সে তার মেধা ও মননেরও যত্ন নেয়। প্রতিনিয়ত একটু একটু করে জ্ঞান অর্জন করতে থাকে। যে বিষয়ে তার বিশেষ পড়াশোনা সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়। তারপর সময় সুযোগ মত অন্যান্য বিষয়েও জ্ঞান অর্জন করতে থাকে। নিজের সময় ও সমাজ সম্পর্কে তার থাকে পরিষ্কার ধারণা।
যেভাবে মেধা ও মননের বিকাশের জন্য সে পরিশ্রম করে, তেমনি তার রূহেরও খোরাক যোগানোর চেষ্টা করে। নিজের অন্তরাত্মাকে সব ধরনের কলুষ থেকে মুক্ত রাখে। নিয়মিত তিলাওয়াত করে। সকাল-সন্ধ্যা যিকির করে। জায়গামত মাসনূন দুআ পাঠ করে। সৎ লোকের সঙ্গ অবলম্বন করে। নেককারদের মজলিসে যাতায়াত করে।
মা-বাবার সাথে আচরণঃ
একজন আদর্শ মুসলিম তার মা-বাবার প্রতি অন্তরের অন্তস্তল থেকে গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করে। তাদের হক আদায়ে যত্নবান হয়। মা-বাবা যদি অমুসলিমও হয় তারপরও তাদের সাথে সদ্ব্যবহারে ত্রুটি করে না।
মা-বাবার সামনে উঁচু আওয়াজে কথা বলে না। তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলে, ন¤্র আচরণ করে। তাদের খেদমত করে। যখন একসাথে হাঁটে তখন বাবার পেছনে পেছনে হাঁটে। যখন বসে তখন বাবাকে আগে বসতে দেয়।
মা-বাবার বন্ধু-বান্ধবকেও শ্রদ্ধা করে। যখন মা-বাবা বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হয়। তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করে-
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًا.
হে আল্লাহ, তুমি তাদেরকে দয়া করো যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।
স্ত্রীর সাথে আচরণঃ
দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের আগে ও পরে ইসলাম যেসকল নির্দেশনা দিয়েছে একজন আদর্শ মুসলিম সেগুলো পালনে সচেষ্ট থাকে। আদর্শ মুসলিম তার জীবনসঙ্গিনী বাছাইয়ে তাড়াহুড়া করে না। বাহ্যিক সৌন্দর্যকে সে উপেক্ষা করে না বটে, তবে বাহ্যিক সৌন্দর্যই তার নিকট সবকিছু নয়। সম্পদ, বংশগত কৌলীন্য ও দৈহিক সৌন্দর্যের উপর সে দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেয়।
একজন আদর্শ মুসলিম দাম্পত্য জীবনকে মনে করে পারস্পরিক ভালোবাসা, অন্যের স্বার্থকে প্রাধান্য দান, সাহায্য-সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্য-সহানুভূতির জীবন।
জীবনসঙ্গিনীর ভুলত্রুটি সে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। ভুলের জন্যে অন্যের সামনে তাকে তিরষ্কার করে না। কোনো কিছু বলতে হলে আড়ালে কোমলভাবে বলে। তার কাজের প্রশংসা করে। তার আবেগ-অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখে। তার মান-অভিমানকে গুরুত্ব দেয়। তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে নিজের আত্মীয়-স্বজনের মতই সুন্দর আচরণ করে। তার কাছে তার আত্মীয়দের ব্যাপারে কোনো কটু কথা বলে না। খাওয়ার সময় রান্নার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে না।
যদি কখনো রাগ হয়, তাহলে রাগের বশবর্তী হয়ে সে তার সাথে খারাপ আচরণ করে না। সে নিজেকে বোঝায়, ‘তার মাঝে যদিও এই দোষ আছে, কিন্তু আল্লাহ তো বলেছেন, তার মাঝে আল্লাহ রেখেছেন আরো অনেক কল্যাণ।’
জীবনসঙ্গিনীর প্রতি তার ভালোবাসা হয় আল্লাহর জন্যে। তাই যদি কখনো কোনো বিষয়ে খারাপও লাগে তারপরও সে আল্লাহর ওয়াস্তে স্ত্রীকে ভালোবেসে যায়।
সে যখন ঘরে প্রবেশ করে তখন সালাম দিয়ে প্রবেশ করে। স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করে। সহযোগিতা করতে না পারলে সহানুভূতি প্রকাশ করে। সে প্রতিদিনের রুটিনবন্দী জীবনকে মাঝেমধ্যে নির্মল হাসি-কৌতুকের মাধ্যমে আনন্দময় করে তোলে।
একজন আদর্শ মুসলিম মা ও স্ত্রীর মাঝে সমন্বয় রক্ষা করে চলে। স্ত্রীর প্রতি যেভাবে খেয়াল রাখে, তেমনি মাকেও সে শ্রদ্ধা করে। মাকেও খুশি রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। কারো হক আদায় করতে গিয়ে অন্যের হক নষ্ট করে না। এক্ষেত্রে সে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়।
সন্তানদের সাথে আচরণঃ
একজন আদর্শ মুসলিমের নিকট সন্তান, ছেলে হোক মেয়ে হোক, আল্লাহর দেয়া নিআমত ও আমানত। সে সবসময় তাদের প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ রাখে। জন্মের পর তাদের জন্যে সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম রাখে। তাদের তরবিয়তের জন্যে সে নিজের সাধ্য মোতাবেক চেষ্টা করে।
তাদেরকে সে মন থেকে ভালোবাসে এবং তাদেরকেও এটা বোঝায় যে, সে তাদেরকে ভালোবাসে।
তাদের জন্যে সে মন খুলে খরচ করে। আদর-সোহাগ ও খরচাদির ক্ষেত্রে সে সন্তানদের মাঝে কোনো ব্যবধান করে না। সব সন্তানকে সমানভাবে আদর করে। সবার জন্যে সমানভাবে খরচ করে।
সন্তানদের আদর্শ জীবন গঠনে সর্বদা মনোযোগী থাকে। তাদের জীবনের উপর প্রভাব পড়তে পারে এমন সকল বিষয়ে তার থাকে তীক্ষè দৃষ্টি । সন্তান কাদের সাথে চলা ফেরা করে, কোথায় যাওয়া আসা করে, অবসর সময়ে কী করে, এসব কিছুরও সে খোঁজ-খবর নেয়, তবে একথা সে সন্তানকে বুঝতে দেয় না। যখন মন্দ কিছু নজরে পড়ে তখন হিকমতের সাথে ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোট বয়স থেকেই তাদের মনে মহৎ চরিত্রের বীজ বুনে দেয়। যেমন- অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, বড়কে সম্মান করা, ছোটকে স্নেহ করা, সদা সত্য বলা ইত্যাদি। যখন সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তাদের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী সন্ধান করে এবং বিবাহের বন্দোবস্ত করে।
বিয়ের পরও সন্তানদের খোঁজ-খবর নেয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উপদেশ দিতে থাকে।
আত্মীয়দের সাথে আচরণঃ
এক আদর্শ মুসলিমের সদাচার শুধু তার মা-বাবা ও স্ত্রী-পুত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং নিকট ও দূর সকল আত্মীয় পর্যন্ত তার সদাচার পৌঁছে যায়। মা-বাবার পরই সে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করে। আত্মীয়দের বিষয়ে সে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে। যদি আত্মীয়দের কেউ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তারপরও সে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। কেবল তাদের সদাচার পাওয়ার আশায় তাদের সাথে সদাচার করে না। সে জানে, আত্মীয়দের সাথে খারাপ আচরণের ফলাফল দুনিয়াতেও ভোগ করতে হয়, আখেরাতে তো ভোগান্তি আছেই। আত্মীয়-স্বজন যদি অমুসলিমও হয় তারপরও তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।
আত্মীয়দের সাথে সদাচারের অর্থ শুধু এই নয় যে, তাদের বিপদে তাদের জন্যে খরচ করলাম। বরং আত্মীয় হিসাবে সদাচার বিভিন্ন রকম হবে। কারো বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া হবে তার সাথে সদাচার। কারো জন্যে সদাচার হবে একটু ভালো কথা বলা, কারো জন্যে সদাচার হবে ইনসাফ করা, কারো জন্যে সদাচার হবে তাদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানো।
মোদ্দাকথা, সময় ও পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়ে সে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।
পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে আচরণঃ
একজন আদর্শ মুসলিম তার পাড়া-প্রতিবেশীর হক সম্পর্কেও সচেতন থাকে। তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখে। তাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে। তাদের কাছ থেকে কষ্ট পেলে সবর করে। তাদের সাথে ভালো আচরণ করার জন্যে তাদের থেকে ভালো আচরণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। ভালো আচরণের জন্যে তাদের থেকে কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাও প্রত্যাশা করে না। প্রতিবেশী মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম, সবার সাথে সে সুন্দর আচরণ করে। হাদিয়া আদান-প্রদান করে। কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যায়। কেউ ইন্তিকাল করলে তার জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হয়। তার পরিবার-পরিজনকে সান্ত¦না দেয়। তাদের সুখে সুখী হয়, তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়।
ঘরের নিত্যপ্র্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো ‘না’ করে না। প্রতিবেশীর জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। ঘরে উঁচু আওয়াজ করে না; পাছে প্রতিবেশীর কষ্ট হয়। যখন ভালো খাবার রান্না করে, তখন প্রতিবেশীকেও শরীক করে।
তার রান্নাঘরের ধোঁয়া, তার বাড়ির ময়লার ভাগাড় প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ হয় না। মাঝেমধ্যে সে প্রতিবেশীর জন্য উপঢৌকন পাঠায়। উপহার ছোট কি বড় তাতে সে ভ্রুক্ষেপ করে না। যে প্রতিবেশীর ঘর সবচেয়ে নিকটে প্রথমে তাকে প্রাধান্য দেয়। এভাবে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে।
মোটকথা, একজন আদর্শ মুসলিম হয় তার প্রতিবেশীর জন্য সর্বোত্তম প্রতিবেশী।
ভাই ও বন্ধুর সাথে আচরণঃ
ভাই ও বন্ধুদের সাথে একজন আদর্শ মুসলিমের সম্পর্ক থাকে স্বচ্ছ। তাদের ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব হয় শুধু আল্লাহর জন্য। বন্ধুর সাথে সে কখনো রূঢ় আচরণ করে না। তাদের সাথে কথা কাটাকাটি করে না। বন্ধুর সাথে এমন কোনো কৌতুক করে না, যা কষ্টদায়ক।
তার কথা ও কাজ হয় এক। সে কখনো দ্বিমুখী আচরণ করে না। কারো গীবত করে না। কারো সাথে ওয়াদাখেলাফি করে না। আমানতের খেয়ানত করে না। কারো অকল্যাণ কামনা করে না।
বন্ধুকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়। তার জন্য দুআ করে। তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে। মনের ভেতর কিছু পুষে রাখে না। কখনো রাগারাগি হলে কথা বন্ধ করে না। সে-ই আগে বেড়ে বন্ধুর সাথে আপোষ করে নেয়। বন্ধুর জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।
বন্ধু যদি কারো উপর যুলুম করে তাহলে তাকে যুলুম থেকে নিবৃত্ত করে। যদি বন্ধু কারো দ্বারা নির্যাতিত হয় তাহলে তার পাশে দাঁড়ায়। সৎকাজে তাকে সহযোগিতা করে। সম্ভব না হলে মুখে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহ দিয়ে শরীক থাকার চেষ্টা করে। বন্ধুকে কোনো কর্তব্য কাজে অবহেলা করতে দেখলে সুন্দর ভাষায় তাকে সতর্ক করে।
সমাজের সাথে আচরণঃ
সাধারণ মানুষের সাথে তার সম্পর্ক হয় একজন উন্নত আখলাকের সম্ভ্রান্ত ভদ্র মানুষের মত। তার সুন্দর আখলাকের পেছনে ভিন্ন কোনো মতলব লুকায়িত থাকে না। আল্লাহর ভয় আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার ভয়ই তাকে ভালো আখলাক অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে।
একজন আদর্শ মুসলিম কাউকে ধোঁকা দেয় না। কারো সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করে না। কারো ভালো দেখে হিংসা করে না।
একজন আদর্শ মুসলিম হয়ে থাকে খুবই সহনশীল ও দয়ালু প্রকৃতির ।
তার চেহারায় সদা হাসি ফুটে থাকে। কাউকে গালি দেয় না।
একজন মুসলিম নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাজে মাথা ঘামায় না। মিথ্যা বলে না। কুধারণা করে না। গীবত করে না। কারো নামে অপবাদ রটায় না।
সে খুব বিনয়ী হয়। কাউকে বিদ্রুপ করে না। মানুষের উপকারের চেষ্টা করে। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সন্ধির চেষ্টা করে। হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে সৎ পথে ডাকে। রোগীর সেবা করে। অসুস্থদের দেখতে যায়। কেউ তার সাথে ভালো আচরণ করলে সে তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করে। সম্ভব না হলে অন্তত তার শোকর আদায় করে।
একজন আদর্শ মুসলিম জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে না। সে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকে। তাদের থেকে কষ্ট পেলে তা হাসিমুখে সয়ে নেয়। মানুষের সাথে যথাসম্ভব সহজভাবে মেশার চেষ্টা করে। বৈধ উপায়ে তাদেরকে বিভিন্ন সময় আনন্দ দেয়। প্রত্যেককে সেই পরামর্শই দেয়, যাতে তার কল্যাণ। সকল বিষয়ে সে সহজতা ও সাবলীলতা পসন্দ করে। কাঠিন্য ও কৃত্রিমতাকে বর্জন করে।
সব বিষয়ে ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা করে। কারো প্রতি অবিচার করে না। কারো প্রতি অন্যায় পক্ষপাতিত্ব করে না। কারো সাথে মুনাফেকী করে না। কাউকে তোষামোদ করে না। লোক দেখানোর জন্যে, সুনামের জন্যে কাজ করে না। সময় ও অবস্থা যেমনই হোক সে সর্বদা সরল পথে অটল থাকে। সময় বুঝে খোলস বদলায় না। তার চিন্তা হয় উঁচু। চিন্তার হীনতা ও তুচ্ছতা থেকে সে মুক্ত থাকে। কথাবার্তায় আড়ম্বর প্রকাশ করে না।
আদর্শ মুসলিম হয় খুব মহানুভব ও সম্ভ্রান্ত। কাউকে কিছু দিয়ে খোঁটা দেয় না। সে খুবই অতিথিপরায়ণ হয়। মেহমানদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে না। হঠাৎ কোনো মেহমান এসে গেলে মেহমানদারি করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে না। নিজে না খেয়ে হলেও তাকে খাওয়ায়।
সে ঋণগ্রস্তদের বোঝা হালকা করার চেষ্টা করে। নিজে অভাবে থাকলেও সেটা অন্যকে বুঝতে দেয় না। তার নিকট উপরের হাত নিচের হাত থেকে পছন্দনীয়। সে অভ্যাসের দাস হয় না। অভ্যাসগুলোকে সে আল্লাহর দেয়া বিধানের অনুগামী বানায়। সে তার প্রত্যাহিক জীবন যথা খাওয়া, পরা, ঘুমানো, সালাম বিনিময়, রোগী দেখতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী শিষ্টাচার পালন করে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন আদর্শ মুসলিমঃ
একজন আদর্শ মুসলিমের নিকট ইসলাম শুধু কিছু আচার অনুষ্ঠানের নাম নয়। ইসলাম ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবন- জীবনের সকল অঙ্গনে আল্লাহর বিধান পালনের নাম। সে সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকে। সে কখনো ভাষাগত কিংবা জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয় না। সে আধুনিক যুগের চটকদার শ্লোগানে ধোঁকা খায় না। সে কখনোই অমুসলিমদেরকে নিজের অন্তরঙ্গ বন্ধু বানায় না। তাদের কাছে মুসলমানদের গোপন কথা ফাঁস করে না। সে অমুসলিমদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে।
আন্তর্জাতিকভাবেও একজন মুসলিমের রয়েছে কিছু দায়িত্ব। একজন আদর্শ মুসলিম সেসকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। পৃথিবীর যেখানেই কোনো মুসলিম নির্যাতিত হয়, সে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সাধ্য অনুযায়ী সে এ নিপীড়ন বন্ধের চেষ্টা করে। সে মুসলমানদের তাদের অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বর্তমানের বেঘোর ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে। ভবিষ্যত সম্পর্কে তাদের মনে আশার আলোক জ্বেলে দেয়।
সংক্ষেপে কিছু বিষয় পেশ করা হল। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম নিজেকে আদর্শ মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার তাওফীক দিন। তারপর এর মাধ্যমে অন্যদেরকেও উপকৃত করুন- আমীন

২- কিছু কিতাবঃ

ক- ইসলাম ও আমাদের সুন্দর জীবন - শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী।

খ- লা-তাহ্‌যান হতাশ হবেন না
by ড. আয়েয আল-কারনী

গ- সুখময় জীবনকে উপভোগ করুন
by ড. শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আরিফী

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

রেফারেন্স উত্তর :

প্রশ্নঃ ৭৮২৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, গুনাহ করে ফেলার পর সঠিক ভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করবো কিভাবে?

৫ আগস্ট, ২০২১
ব্রাহ্মণবাড়িয়া

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




মুমিনের গুনাহ হয়ে গেলে করনীয়ঃ

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ، صُقِلَ قَلْبُهُ، وَإِنْ زَادَ زَادَتْ، حَتّى يَعْلُوَ قَلْبَهُ. ذَاكَ الرّانُ الّذِي ذَكَرَ اللهُ عَزّ وَجَلّ فِي الْقُرْآنِ: كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ .

মুমিনের গুনাহ হয়ে গেলে তাতে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। তখন সে যদি তাওবা করে, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং ইস্তিগফার করে তাহলে তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু যদি আরো গুনাহ করে, তাহলে কালো দাগ বাড়তে থাকে, একসময় তার অন্তর কালো দাগে ছেয়ে যায়। এটাই সেই জং, যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন-

كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

‘না, কখনো নয়; বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে। [সূরা মুতাফফিফীন (৮৩) : ১৪] -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৯৫২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৪৪

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত হাদীস থেকে জানা গেল যে, গুনাহ, পাপাচার ও মন্দকর্মের কারণে শুধু কাফিরদেরই অন্তর কালো হয়ে যায় তা নয়, বরং মুসলমানও যদি গুনাহ করে তাহলে তার অন্তরেও গুনাহের গান্দেগীর কারণে কালো দাগ পড়ে যায়। কিন্তু সে যদি অন্তর থেকে তাওবা করে, ইস্তেগফার করে তাহলে সেই কালো দাগ দূর হয়ে যায়, কলব আবার আগের মত পবিত্র ও আলোকিত হয়ে যায়। কিন্তু গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর যদি তাওবা-ইস্তিগফার না করে, গুনাহ ও অবাধ্যতার পথেই চলতে থাকে, তাহলে অন্তরে অন্ধকার বাড়তে থাকে। একসময় পুরো অন্তর অন্ধকারে ছেয়ে যায়।

পক্ষান্তরে ফাসেক-ফাজেরের কাছে গোনাহ কোনো পেরেশানীর বিষয়ই নয়। একটি হাদীসে একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে-

إِنّ المُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنّ الفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرّ عَلَى أَنْفِهِ.

মুমিনের কাছে গোনাহ যেন পতনোন্মুখ পাহাড়, যার পাদদেশে সে বসা; যে কোনো মুহূর্তে তা ভেঙে পড়তে পারে তার উপর (ধ্বংস করে দিতে পারে তাকে)। আর ফাসেক-ফাজেরের কাছে গোনাহ যেন নাকের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সামান্য মাছির মত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩০৮
হাঁ, মুমিনের কাছে গোনাহ এমনই। গোনাহকে মুমিন পাহাড়সম বোঝা হিসেবে দেখে। কোনো পাপ হয়ে গেলে ব্যথিত হয়, কষ্টে থাকে। আফসোস-আক্ষেপ করতে থাকে- কেন পাপে জড়ালাম! আর এটিই ঈমানের আলামত।

গোনাহ তো হয়েই যায়। শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়- গোনাহ হয়েই যায়। কিন্তু আশার কথা হল, আল্লাহ বান্দার জন্য রেখেছেন পাপ মোচনের অগণিত পথ।

অতএব, গোনাহের এলাজ হলো তাওবা।
তাওবার মাধ্যমে মহাপাপীও হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত; শয়তানের সকল অপচেষ্টা মুহূর্তে ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

التّائِبُ مِنَ الذّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.

গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মত। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৫০

***তাওবা দু’প্রকার। ইজমালি তাওবা ও তাফসীলি তাওবা।

ইজমালি তাওবা হলো একসঙ্গে পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে তাওবা করা। অর্থাৎ প্রথমে দু’রাকাত ‘ছালাতে তাওবা’ পড়ে এভাবে দু’আ করবে, ‘হে আল্লাহ! জীবনে আমার যত গোনাহ হয়েছে, যত ভুল-ভ্রান্তি ও পদস্খলন ঘটেছে, সমস্ত কিছু থেকে আমি আপনার কাছে মাফ চাই। হে আল্লাহ, আমি তাওবা করছি, ইসতিগফার করছি, এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি যে, বাকি জীবনে কখনো কোন গোনাহ করবো না। আপনি কবুল করুন এবং তাওফীক দান করুন, আমীন।’ এটা হলো ইজমালি তাওবা।

এর পর হলো তাফছীলি তাওবা। অর্থাৎ প্রতিটি গোনাহ থেকে আলাদা আলাদা তাওবা করা। এই তাওবার নিয়ম এই যে, যে গোনাহ থেকে তাওবা করা হচ্ছে যদি তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে; এখন ক্ষতিপূরণ না করে বসে বসে তাওবা করছে। তো এমন তাওবা কীভাবে কবুল হতে পারে! আগে তো পয়সা ফেরত দিতে হবে, কিংবা যার পয়সা তার কাছ থেকে মাফ নিতে হবে, তারপর তাওবা করতে হবে। তদ্রূপ কাউকে কষ্ট দেয়া। তো মাফ চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে এর ক্ষতিপূরণ হতে পারে। এটা না করে শুধু তাওবা করা যথেষ্ট নয়। উপরে যা বলা হলো তা হচ্ছে হুকূকুল ইবাদ বা বান্দার হক থেকে তাওবা করার বিষয়। আল্লাহর হক থেকে তাওবা করা সম্পর্কেও একই কথা।
মোটকথা, তাফছীলি তাওবা এই যে, মানুষ নিজের পিছনের জীবনের হিসাব নিয়ে দেখবে যে, তার যিম্মায় আল্লাহর, কিংবা বান্দার কোন হক ওয়াজিব আছে কি না? এবং সেগুলোর ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব কি না? যদি সম্ভব না হয় তাহলে শুধু তাওবা করাই যথেষ্ট। আর যদি ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন নামায আল্লাহর হক। তো হিসাব করে দেখবে যে, আমার যিম্মায় কত ওয়াক্তের নামায কাযা আছে। সেগুলো আদায় করার চেষ্টা-ফিকির শুরু করে দেবে।
এটা হলো তাফছীলি তাওবা।

জনৈক ব্যক্তি হযরত থানবী (রাহ.)-এর কাছে পত্র লিখেছেন যে, প্রতিসপ্তাহেই আমি তাওবা করি, কিন্তু একদিন পার না হতেই সব প্রতিজ্ঞা তছনছ হয়ে যায়। এ অবস্থা অবশ্য প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই দেখা দেয়। মানুষ পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে খাঁটি মনেই তাওবা করে এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার বিষয়ে খুব দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু একদু’দিন পরই নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় এবং পরিবেশ ও পরিসি'তির মোকাবেলায় সব সংকল্প ভেসে যায় এবং আবার গোনাহ ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত প্রায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এ অবস্থা দেখা দেয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এই পেরেশানির সমাধানের জন্য প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে তাওবার শর্ত কী কী? তাওবাতুন্‌নাছূহ বা খাঁটি তাওবার জন্য শরীয়াতে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছে। এই শর্ততিনটি পাওয়া গেলেই বলা হবে যে, বান্দা খাঁটি তাওবা করেছে।

প্রথম শর্ত হলো অন্তরে গোনাহের প্রতি ঘৃণা থাকা এবং গোনাহ ও নাফরমানির কারণে অন্তরে লজ্জা ও অনুশোচনা আসা। যদি গোনাহের প্রতি ঘৃণাই না থাকে, অন্তরে যদি লজ্জা ও অনুশোচনাই না জাগে, গোনাহকে যদি গোনাইই মনে না করে তাহলে আর তাওবা হলো কোথায়? সেটা তো বরং বড় ভয়ের কথা। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলমানকে তা থেকে হেফাযত করুন, আমীন। তো তাওবার জন্য প্রথম শর্ত হলো গোনাহের কারণে লজ্জিত ও শরমিন্দা হওয়া যে, ইয়া আল্লাহ, আমার তো বড় ভুল হয়ে গেছে! হায়, কেয়ামতের দিন কীভাবে আল্লাহর সামনে মুখ দেখাবো! আয় আল্লাহ, আমি ভুল স্বীকার করছি, আমাকে মাফ করে দিন।

দ্বিতীয় শর্ত হলো সঙ্গে সঙ্গে ঐ গোনাহটি ছেড়ে দেয়া। এছাড়া তাওবা পূর্ণ হতে পারে না। এটা কীভাবে সম্ভব যে, মানুষ একদিকে তাওবা করবে, অন্যদিকে গোনাহও করে যাবে! এটা তো আল্লাহর সঙ্গে তামাশার মত হলো! এর পরিণতি তো খুবই ভয়াবহ!

তাওবার তৃতীয় শর্ত হলো ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা এবং প্রতিজ্ঞার উপর অবিচল থাকার আন্তরিক চেষ্টা করা। এই তিনটি হলো তাওবার শর্ত। এছাড়া তাওবা পূর্ণ হয় না।

তাওবার প্রথম যে শর্ত, অর্থাৎ গোনাহের কারণে লজ্জিত ও শরমিন্দা হওয়া, এটা তো প্রায় প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিরই হয়ে থাকে। সামান্য ঈমান যার দিলে আছে সে গোনাহ করার পর অবশ্যই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। তারপর দ্বিতীয় শর্ত গোনাহ ছেড়ে দেয়া, এর উপরও সাধারণত আমল হয়ে যায়। মানুষ গোনাহ করার পর কিছু সময়ের জন্য হলেও গোনাহ ছেড়ে দেয়।
তবে তৃতীয় শর্তটি সম্পর্কে মনে দ্বিধা-সন্দেহ আসতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে গোনাহ না করার যে প্রতিজ্ঞা সেটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হলো কি না তা অনেক সময় বোঝা যায় না। কারণ প্রতিজ্ঞা করার সময়ও মনের মধ্যে এই খটকা লেগে থাকে যে, তাওবা তো করছি, কিন্তু কে জানে, কতক্ষণ এই তাওবার উপর অবিচল থাকতে পারবো? কতটা সময় নিজেকে গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো? মনের মধ্যে এই খটকা ও দ্বিধা-সন্দেহ থাকা অবস্থায় কি আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হয়? আর প্রতিজ্ঞতার দৃঢ়তা সম্পর্কেই যখন দ্বিধা-সন্দেহ, তখন আর তাওবা পূর্ণ হলো কোথায়? এসব কারণে মানুষ খুব পেরেশানির শিকার হয়। খটকা ও উৎকণ্ঠা তাওবার বিরোধী নয় বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে বুঝে নিন যে, পাক্কা ও সাচ্চা তাওবার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা অবশ্যই জরুরি।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন