আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৯১৩
২৫৭৪.আল্লাহর বাণীঃ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ ″তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ (৬৬ঃ ১)

পরিচ্ছেদঃ ২৫৭৫. আল্লাহর বাণীঃ قد فرض الله لكم تحلة أيمانكم والله مولاكم وهو العليم الحكيم "আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ তোমাদের কর্মবিধায়ক, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়" (৬৬ঃ ২)
৪৫৫২। আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর ইবনে খত্তাব (রাযিঃ) কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আমি এক বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে সক্ষম হইনি। অবশেষে তিনি হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে আমিও তাঁর সাঙ্গে গেলাম। প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা যখন কোন একটি রাস্তা অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সাথে পথ চলতে চলতে বললাম, হে আমীরুল মু'মিনীন! নবী (ﷺ) এর স্ত্রীদের কোন দু‘জন তার বিপক্ষে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? তিনি বললেন, তারা দু‘জন হল হাফসা ও আয়িশা (রা)। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য এক বছর যাবত ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু আপনার ভয়ে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, এমন করবে না। যে বিষয়ে তুমি মনে করবে যে, আমি তা জানি, তা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। এ বিষয়ে আমার জানা থাকলে আমি তোমাকে জানিয়ে দেব।
তিনি বলেন, এরপর উমর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! জাহিলী যুগে মহিলাদের কোন আধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ তাদের সম্পর্কে যে বিধান নাযিল করার ছিল তা নাযিল করলেন এবং তাদের হক হিসেবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন, একদিন আমি কোন এক বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলাম, এমতাবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে বললেন, কাজটি যদি আপনি এভাবে এভাবে করেন (তাহলে ভালো হবে)। আমি বললাম, তোমার কি প্রয়োজন? এবং আমার কাজে তোমার এ অনধিকার চর্চা কেন? সে আমাকে বলল, হে খত্তাবের বেটা! কি আশ্চর্য, তুমি চাও না যে, আমি তোমার কথার উত্তর দান করি, অথচ তোমার কন্যা হাফসা (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথার পৃষ্ঠে কথা বলে থাকে।, এমনকি একদিন তো সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে রাগান্বিত করে ফেলে। এ কথা শুনে উমর (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাঁদরখানা নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, বেটি! তুমি নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথার প্রতি-উত্তর করে থাক, ফলে তিনি দিনভর মনঃক্ষুণ্ন থাকেন।

হাফসা (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, জেনে রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তি এবং রাসূল (ﷺ) এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভালোবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে, সে যেন তোমাকে প্রতারিত করতে না পারে। একথা বলে উমর (রা) আয়েশা (রা)-কে বুঝাচ্ছিলেন। উমর (রাযিঃ) বলেন, এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম এবং উম্মে সালামা (রাযিঃ) এর ঘরে প্রবেশ করলাম ও এই বিষয়ে তাঁর সাথে কথাবার্তা বললাম। কারণ তাঁর সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মে সালামা (রাযিঃ) বললেন, হে খত্তাবের বেটা! কি আশ্চর্য, তুমি প্রত্যেক ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করছ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে এমন কঠোরভাবে ধরলেন যে, আমার গোস্বাকে একেবারে শেষ করে দিলেন।
এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে আসলাম। আমার একজন আনসার বন্ধু ছিল। যদি আমি কোন মজলিস থেকে অনুপস্থিত থাকতাম তাহলে সে এসে মজলিসের খবর আমাকে জানাত। আর সে যদি অনুপস্থিত থাকত তাহলে আমি এসে তাকে মজলিসের খবর জানাতাম। সেসময় আমরা গাসসানী বাদশাহের আক্রমণের আশঙ্কা করছিলাম। আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, সে আমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যাত্রা করেছে। তাই আমাদের হৃদয়-মন এ ভয়ে শঙ্কিত ছিল। এমন সময় আমার আনসার বন্ধু এসে দরজায় করাঘাত করে বললেন, দরজা খুলুন, দরজা খুলুন। আমি বললাম, গাসসানীরা এসে পড়েছে নাকি? তিনি বললেন; বরং এর চেয়েও সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) তাঁর সহধর্মিনীদের থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছেন। তখন আমি বললাম, হাফসা ও আয়িশার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। গিয়ে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) একটি উঁচু টোঙে আবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। সিঁড়ির মুখে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর একজন কালো গোলাম বসা ছিল।
আমি বললাম, বলুন, উমর ইবনে খত্তাব এসেছেন। এরপর রাসূল(ﷺ) আমাকে অনুমতি দিলেন, আমি তাঁকে এসব ঘটনা বললাম, এক পর্যায়ে আমি যখন উম্মে সালামার কথোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন রাসূল(ﷺ) মুচকি হাসলেন। এসময় তিনি একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই ও রাসূল(ﷺ) এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নীচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ ও পায়ের কাছে ছিল সলম গাছের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। আমি রাসূল(ﷺ) এর এক পাশে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন, তুমি কেন কাঁদছ ? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগ-বিলাসের মধ্যে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি কি পছন্দ করো না যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখিরাত লাভ করি।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন