আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

৫৮. সাদ্কা সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৮৮১
২. ভিক্ষা করা হইতে বিরত থাকা প্রসঙ্গ
রেওয়ায়ত ১০. আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিয়াছেন, সেই পাক যাতের কসম, যাহার হাতে আমার প্রাণ রহিয়াছে, যদি কোন মুসলমান রশি দিয়া জ্বালানি কাঠের বোঝা বাঁধিয়া উহা স্বীয় পৃষ্ঠে তুলিয়া লয় (এবং উহাকে বিক্রি করিয়া রোজগার করে), তাহা সেই ব্যক্তির জন্য ইহা হইতে উত্তম যে, সে এমন কোন ব্যক্তির নিকট গিয়া কিছু (ভিক্ষা) চায়, যাহাকে আল্লাহ তাআলা মাল দিয়াছেন, সে তাহাকে কিছু দিক বা না দিক।*
باب مَا جَاءَ فِي التَّعَفُّفِ عَنْ الْمَسْأَلَةِ
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَحْتَطِبَ عَلَى ظَهْرِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَأْتِيَ رَجُلًا أَعْطَاهُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ فَيَسْأَلَهُ أَعْطَاهُ أَوْ مَنَعَهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে অন্যের কাছে চেয়ে খাওয়ার উপর পরিশ্রম করে খাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তাতে সে পরিশ্রম যত কঠোরই হোক না কেন। বন-জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনা এমনিই কঠিন কাজ। তা যদি হয় পাহাড়ের উপর, তবে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। তার উপর আবার যদি সে কাঠ নিজের পিঠে করে টেনে আনতে হয়, তবে তা কত কষ্টসাধ্য বলাই বাহুল্য। এতদসত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যের কাছে হাত না পেতে এরূপ কষ্টসাধ্য কাজ করে খেতে বলেছেন।

কাঠ কুড়ানোর কাজটিকে সমাজচোখে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল সওয়াল করে খাওয়া তারচে'ও নিম্নস্তরের। বরং পরিশ্রম করে খাওয়াকে মানুষ যে চোখেই দেখুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাতে লজ্জার কিছু নেই। চেয়ে খাওয়াই মূলত লজ্জার বিষয়। তাতে ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হয়। হাদীসে আছে- فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ 'এভাবে আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা তার চেহারাকে (অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার বেইজ্জতি থেকে) রক্ষা করবেন'। অর্থাৎ মানুষের কাছে চাওয়ার দ্বারা মান-সম্মান নষ্ট হয়। কামাই-রোজগার করার দ্বারা মান-সম্মান রক্ষা পায়। বোঝা গেল মানুষের মান-সম্মান অনেক মূল্যবান। কিছুতেই তা নষ্ট হতে দিতে নেই। কামাই-রোজগারের কাজ যত কঠিনই হোক না কেন, তা দ্বারা যেহেতু মান-সম্মানের হেফাজত হয়, তাই সওয়াল না করে এতেই লিপ্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া কামাই-রোজগার করলে অনেক সময় দান-খয়রাতও করা যায়, যা বড়ই নেকীর কাজ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে ভিক্ষা করা বা অন্যের কাছে হাত পাতা উচিত নয় কিছুতেই।

খ. যত কষ্টসাধ্যই হোক না কেন, কামাই-রোজগার করেই খাওয়া উচিত।

গ. উপার্জনের পন্থাটি যদি বৈধ হয়, তবে সমাজচোখে তা যতই নিম্নস্তরের হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাতে লজ্জার কিছু নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান