মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩০৯৮
১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩০৯৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া বলিল, আমি আনসারীদের একটি মেয়েকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা করিয়াছি। হুযুর (ছাঃ) বলিলেন: তাহাকে প্রথমে দেখিয়া লও। কেননা, আনসারীদের (কোন কোন লোকের) চোখে একটা দোষ থাকে। মুসলিম
بَابُ النَّظِرِ إِلَى الْمَخْطُوْبَةِ وَبَيَانِ الْعَوْرَاتِ: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً مِنَ الْأَنْصَارِ قَالَ: «فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِي أَعْيُنِ الْأَنْصَارِ شَيْئًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
পাত্রী দেখা, আবরণীয় অঙ্গ ও পর্দা
১। যাহাকে বিবাহ করিবার ইচ্ছা, তাহাকে প্রস্তাবের আগে একবার দেখিয়া লওয়া মোস্তাহাব। প্রস্তাবের পরে দেখা সম্পর্কে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, ও আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে ইহা জায়েয-পাত্রী অনুমতি দিক বা না দিক। কিন্তু ইমাম মালেকের মতে তখন পাত্রী অনুমতি দিলে তবেই জায়েয।
পাত্রী দেখার পর না-পছন্দ হইলে খুব সতর্কতার সাথে ঐ সম্পর্ক ত্যাগ করিবে, যেন পাত্রীর ক্ষতি না হয়।
পাত্র তখন পরপুরুষ বিধায় পাত্রীর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি আর কাহারও কাহারও মতে পায়ের পাতা ও হাতের কনুইর বেশী দেখিতে পারিবে না। কোন পুরুষ মুরুব্বী চাহিলেও ঐ সকল অঙ্গই দেখিতে পারিবে।
আবশ্যক হইলে পাত্রের মঙ্গলের খাতিরে ও নেক নিয়তির সাথে পাত্রীর কোন সত্য দোষ থাকিলে উহা প্রকাশ করায় গোনাহ্ নাই। অন্যথায় গোনাহ্ হইবে।
২। নারী অঙ্গের আবরণীয় স্থান ও নারী-পুরুষের কর্তব্য সম্পর্কে কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ - وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“বলুন মু'মিনদিগকে, তাহারা যেন নিজেদের চক্ষু আনত রাখে এবং হেফাযত করে তাহাদের লজ্জাস্থানের। ইহা হইল তাহাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয় আল্লাহ্ অবগত আছেন তাহারা যাহা করে। এইরূপ বলুন মু'মিন নারীদিগকে, তাহারা যেন আনত রাখে তাহাদের চক্ষুকে এবং হেফাযত করে তাহাদের লজ্জাস্থানের এবং প্রকাশ না করে নিজেদের শোভার স্থানসমূহকে, যাহা সাধারণত খোলা থাকে তাহা ব্যতীত (অর্থাৎ মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা) এবং তাহারা যেন তাহাদের মাথার চাদরকে (উড়নীকে, কাঁধের দুই ধার দিয়া) বুকের উপর টানিয়া দেয় এবং এ সকল লোক ব্যতীত অপরদের জন্য স্বীয় যীনতসমূহ প্রকাশ হইতে যেন না দেয়— স্বীয় স্বামী, পিতা, স্বামীর পিতা, নিজেদের সন্তান, নিজের স্বামীর সন্তান, ভাই, ভাইদের সন্তান, বোনদের সন্তান, স্বধর্মীয়া নারী, আপন ক্রীতদাস, আকর্ষণহীন অনুচর ও নারীদের গুপ্তস্থান সম্পর্কে অজ্ঞ বালক এবং তাহারা যেন সজোরে পা না বাড়ায়, যাহাতে তাহাদের গোপন শোভা প্রকাশিত হইয়া পড়ে। হে মু'মিনগণ, তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হও যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।” (সূরা নূর, আয়াত ৩০–৩১ )
আয়াতে নারী-পুরুষকে চোখ নীচ রাখিতে অর্থাৎ, একে অন্যকে না দেখিতে বলা হইয়াছে এবং নারী অঙ্গের ‘যাহা সাধারণত খোলা থাকে' তাহা ব্যতীত বাকী অঙ্গ প্রকাশ না করিতে বলা হইয়াছে। সুতরাং তাহা পরপুরুষ হইতে আবরণীয়। আর যাহা সাধারণত খোলা থাকে তাহা হইল মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা। সুতরাং আজনবী পুরুষ আবশ্যক হইলে তাহা দেখিতে পারে। বিনা আবশ্যকে তাহা দেখাও মারূহ; বরং বদনজরে দেখা হারাম।
অবশ্য বাপ, ভাই, চাচা, মামা ও শ্বশুর প্রভৃতি মাহরাম ব্যক্তিদের জন্য ‘শোভাস্থানসমূহকে’ বাদ দেওয়া হইয়াছে। আবশ্যকে তাহারা তাহা দেখিতে পারেন। আর 'শোভাস্থান' অর্থে সাহাবা, তাবেয়ীন, ইমাম ও ফকীহগণ মুখমণ্ডল, ঘাড়, বুক, হাতের ডাটা কনুই পর্যন্ত ও পায়ের নালাকে বুঝিয়াছেন। শোভার জন্য নারীরা এ সকল স্থানে গহনা পরে। সুতরাং মাহরাম ব্যক্তিগণ এ সকল স্থান দেখিতে পারে যদি কুনজরে না দেখে। কুনজরে দেখা তাহাদের পক্ষেও হারাম।
এই তো গেল সাধারণ নারীদের কথা। নবী করীম (ﷺ)-এর বিবিদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا - وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ
“হে নবীর বিবিগণ, তোমরা অন্য নারীদের ন্যায় নও—যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে তোমরা তোমাদের কথাকে নরম করিও না। ইহাতে যাহার অন্তরে রোগ রহিয়াছে সে বদ লালসা করিতে পারে। সুতরাং তোমরা (পবিত্রতা রক্ষার মত করিয়া) নিয়মের কথা বলিবে। এছাড়া তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করিবে এবং জাহেলিয়াত যুগের নিয়মানুসারে বাহিরে ঘুরাফিরা করিবে না।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৩২–৩৩)
অপর জায়গায় উম্মতের পুরুষদেরে বলা হইয়াছে—
إِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
“তোমরা যখন তাহাদের (নবীর বিবিদের) নিকট কোন জিনিস চাহিবে, পর্দার বাহিরে থাকিয়া চাহিবে। ইহা তোমাদের ও তাহাদের অন্তরসমূহের পক্ষে পবিত্র।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৫৩ )
আয়াতে নবী করীম (ﷺ)-এর বিবিদেরকে পর্দায় থাকিতে বলা হইয়াছে। তবে নবী করীম (ﷺ)-এর ওফাতের পর যখন সাধারণ নারীদের চাল-চলনে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, তখন সাহাবা, তাবেয়ীন ও ইমামগণের যুগেই তাহাদিগকেও পর্দা পালন করিতে বলা হয়। বোখারীতে আছে, বিবি আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেন, “নারীগণ এখন যে ধরনের চাল-চলন এখতিয়ার করিয়াছে, তাহা যদি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দেখিতেন, তবে নিশ্চয় তাহাদিগকে মসজিদে যাইতে বাধা দিতেন।"
পরবর্তীকালের এই ব্যবস্থা যে খুবই সমীচীন হইয়াছে তাহা যে কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিই বলিতে বাধ্য। যেসকল সম্প্রদায় বা জাতিতে পর্দার ব্যবস্থা নাই, সেসকল সম্প্রদায় বা জাতির যৌন অনাচারে আজ শয়তানও লজ্জিত।
বাকী রহিল নারীদের জরুরী কাজে ও শিক্ষার জন্য বাহির হওয়া। চক্ষু নত রাখিয়া ও শরীর আনত করিয়া এসকল কাজের জন্য বাহির হওয়া না পূর্বে নিষেধ ছিল না এখন নিষেধ। নারী শিক্ষার জন্য আবশ্যক নারীদের পৃথক শিক্ষাগার ও পৃথক পরিবেশের। তবে এখানে বিবেচ্যঃ নারীদের কি শিক্ষা লাভ আবশ্যক এবং কতখানি শিক্ষা আবশ্যক। নারীদের পক্ষে ডাক্তার হওয়ার ও শিশু মনস্তত্ত্ব জানার আবশ্যকতা আছে, কিন্তু তাহাদিগকে ইঞ্জিনিয়ার বা জজ-ব্যারিষ্টার হওয়ার আবশ্যকতা আছে কি? পুরুষদের সংখ্যায় কি টান পড়িয়াছে? নারীদের খোরপোষ ও সন্তান পোষণের ভার শরীঅত পুরুষদের প্রতি ন্যস্ত করিয়া নারীদেরকে অর্থকরী শিক্ষা গ্রহণ হইতে অব্যাহতি দিয়াছে।
৩। পুরুষদের নাভি হইতে হাঁটু পর্যন্ত অঙ্গ আওরত বা আবরণীয়। আপন স্ত্রী ব্যতীত কাহাকেও ইহা দেখান বা কাহারও ইহা দেখা উভয় হারাম। দাড়ি গজায় নাই এমন সুন্দর-সুদর্শন যুবকদের প্রতি কুনজরে দৃষ্টি করা বা তাহাকে স্পর্শ করাও হারাম। মোটকথা, ইসলাম পূর্ণ মানবীয় পরিবেশকে নিষ্কলুষ ও পবিত্র রাখিতে চাহে। (মেরকাত, হেদায়া ও শামী)। —ব্যাখ্যাকার
ইহাতে বুঝা গেল — (১) পাত্রী আগে দেখিয়া লওয়া ভাল। (২) পাত্রের মঙ্গলের খাতিরে পাত্রীর প্রকৃত দোষ বলা যায়।
১। যাহাকে বিবাহ করিবার ইচ্ছা, তাহাকে প্রস্তাবের আগে একবার দেখিয়া লওয়া মোস্তাহাব। প্রস্তাবের পরে দেখা সম্পর্কে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, ও আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে ইহা জায়েয-পাত্রী অনুমতি দিক বা না দিক। কিন্তু ইমাম মালেকের মতে তখন পাত্রী অনুমতি দিলে তবেই জায়েয।
পাত্রী দেখার পর না-পছন্দ হইলে খুব সতর্কতার সাথে ঐ সম্পর্ক ত্যাগ করিবে, যেন পাত্রীর ক্ষতি না হয়।
পাত্র তখন পরপুরুষ বিধায় পাত্রীর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি আর কাহারও কাহারও মতে পায়ের পাতা ও হাতের কনুইর বেশী দেখিতে পারিবে না। কোন পুরুষ মুরুব্বী চাহিলেও ঐ সকল অঙ্গই দেখিতে পারিবে।
আবশ্যক হইলে পাত্রের মঙ্গলের খাতিরে ও নেক নিয়তির সাথে পাত্রীর কোন সত্য দোষ থাকিলে উহা প্রকাশ করায় গোনাহ্ নাই। অন্যথায় গোনাহ্ হইবে।
২। নারী অঙ্গের আবরণীয় স্থান ও নারী-পুরুষের কর্তব্য সম্পর্কে কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ - وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“বলুন মু'মিনদিগকে, তাহারা যেন নিজেদের চক্ষু আনত রাখে এবং হেফাযত করে তাহাদের লজ্জাস্থানের। ইহা হইল তাহাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয় আল্লাহ্ অবগত আছেন তাহারা যাহা করে। এইরূপ বলুন মু'মিন নারীদিগকে, তাহারা যেন আনত রাখে তাহাদের চক্ষুকে এবং হেফাযত করে তাহাদের লজ্জাস্থানের এবং প্রকাশ না করে নিজেদের শোভার স্থানসমূহকে, যাহা সাধারণত খোলা থাকে তাহা ব্যতীত (অর্থাৎ মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা) এবং তাহারা যেন তাহাদের মাথার চাদরকে (উড়নীকে, কাঁধের দুই ধার দিয়া) বুকের উপর টানিয়া দেয় এবং এ সকল লোক ব্যতীত অপরদের জন্য স্বীয় যীনতসমূহ প্রকাশ হইতে যেন না দেয়— স্বীয় স্বামী, পিতা, স্বামীর পিতা, নিজেদের সন্তান, নিজের স্বামীর সন্তান, ভাই, ভাইদের সন্তান, বোনদের সন্তান, স্বধর্মীয়া নারী, আপন ক্রীতদাস, আকর্ষণহীন অনুচর ও নারীদের গুপ্তস্থান সম্পর্কে অজ্ঞ বালক এবং তাহারা যেন সজোরে পা না বাড়ায়, যাহাতে তাহাদের গোপন শোভা প্রকাশিত হইয়া পড়ে। হে মু'মিনগণ, তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হও যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।” (সূরা নূর, আয়াত ৩০–৩১ )
আয়াতে নারী-পুরুষকে চোখ নীচ রাখিতে অর্থাৎ, একে অন্যকে না দেখিতে বলা হইয়াছে এবং নারী অঙ্গের ‘যাহা সাধারণত খোলা থাকে' তাহা ব্যতীত বাকী অঙ্গ প্রকাশ না করিতে বলা হইয়াছে। সুতরাং তাহা পরপুরুষ হইতে আবরণীয়। আর যাহা সাধারণত খোলা থাকে তাহা হইল মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা। সুতরাং আজনবী পুরুষ আবশ্যক হইলে তাহা দেখিতে পারে। বিনা আবশ্যকে তাহা দেখাও মারূহ; বরং বদনজরে দেখা হারাম।
অবশ্য বাপ, ভাই, চাচা, মামা ও শ্বশুর প্রভৃতি মাহরাম ব্যক্তিদের জন্য ‘শোভাস্থানসমূহকে’ বাদ দেওয়া হইয়াছে। আবশ্যকে তাহারা তাহা দেখিতে পারেন। আর 'শোভাস্থান' অর্থে সাহাবা, তাবেয়ীন, ইমাম ও ফকীহগণ মুখমণ্ডল, ঘাড়, বুক, হাতের ডাটা কনুই পর্যন্ত ও পায়ের নালাকে বুঝিয়াছেন। শোভার জন্য নারীরা এ সকল স্থানে গহনা পরে। সুতরাং মাহরাম ব্যক্তিগণ এ সকল স্থান দেখিতে পারে যদি কুনজরে না দেখে। কুনজরে দেখা তাহাদের পক্ষেও হারাম।
এই তো গেল সাধারণ নারীদের কথা। নবী করীম (ﷺ)-এর বিবিদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হইয়াছেঃ
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا - وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ
“হে নবীর বিবিগণ, তোমরা অন্য নারীদের ন্যায় নও—যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে তোমরা তোমাদের কথাকে নরম করিও না। ইহাতে যাহার অন্তরে রোগ রহিয়াছে সে বদ লালসা করিতে পারে। সুতরাং তোমরা (পবিত্রতা রক্ষার মত করিয়া) নিয়মের কথা বলিবে। এছাড়া তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করিবে এবং জাহেলিয়াত যুগের নিয়মানুসারে বাহিরে ঘুরাফিরা করিবে না।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৩২–৩৩)
অপর জায়গায় উম্মতের পুরুষদেরে বলা হইয়াছে—
إِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
“তোমরা যখন তাহাদের (নবীর বিবিদের) নিকট কোন জিনিস চাহিবে, পর্দার বাহিরে থাকিয়া চাহিবে। ইহা তোমাদের ও তাহাদের অন্তরসমূহের পক্ষে পবিত্র।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৫৩ )
আয়াতে নবী করীম (ﷺ)-এর বিবিদেরকে পর্দায় থাকিতে বলা হইয়াছে। তবে নবী করীম (ﷺ)-এর ওফাতের পর যখন সাধারণ নারীদের চাল-চলনে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, তখন সাহাবা, তাবেয়ীন ও ইমামগণের যুগেই তাহাদিগকেও পর্দা পালন করিতে বলা হয়। বোখারীতে আছে, বিবি আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেন, “নারীগণ এখন যে ধরনের চাল-চলন এখতিয়ার করিয়াছে, তাহা যদি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দেখিতেন, তবে নিশ্চয় তাহাদিগকে মসজিদে যাইতে বাধা দিতেন।"
পরবর্তীকালের এই ব্যবস্থা যে খুবই সমীচীন হইয়াছে তাহা যে কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিই বলিতে বাধ্য। যেসকল সম্প্রদায় বা জাতিতে পর্দার ব্যবস্থা নাই, সেসকল সম্প্রদায় বা জাতির যৌন অনাচারে আজ শয়তানও লজ্জিত।
বাকী রহিল নারীদের জরুরী কাজে ও শিক্ষার জন্য বাহির হওয়া। চক্ষু নত রাখিয়া ও শরীর আনত করিয়া এসকল কাজের জন্য বাহির হওয়া না পূর্বে নিষেধ ছিল না এখন নিষেধ। নারী শিক্ষার জন্য আবশ্যক নারীদের পৃথক শিক্ষাগার ও পৃথক পরিবেশের। তবে এখানে বিবেচ্যঃ নারীদের কি শিক্ষা লাভ আবশ্যক এবং কতখানি শিক্ষা আবশ্যক। নারীদের পক্ষে ডাক্তার হওয়ার ও শিশু মনস্তত্ত্ব জানার আবশ্যকতা আছে, কিন্তু তাহাদিগকে ইঞ্জিনিয়ার বা জজ-ব্যারিষ্টার হওয়ার আবশ্যকতা আছে কি? পুরুষদের সংখ্যায় কি টান পড়িয়াছে? নারীদের খোরপোষ ও সন্তান পোষণের ভার শরীঅত পুরুষদের প্রতি ন্যস্ত করিয়া নারীদেরকে অর্থকরী শিক্ষা গ্রহণ হইতে অব্যাহতি দিয়াছে।
৩। পুরুষদের নাভি হইতে হাঁটু পর্যন্ত অঙ্গ আওরত বা আবরণীয়। আপন স্ত্রী ব্যতীত কাহাকেও ইহা দেখান বা কাহারও ইহা দেখা উভয় হারাম। দাড়ি গজায় নাই এমন সুন্দর-সুদর্শন যুবকদের প্রতি কুনজরে দৃষ্টি করা বা তাহাকে স্পর্শ করাও হারাম। মোটকথা, ইসলাম পূর্ণ মানবীয় পরিবেশকে নিষ্কলুষ ও পবিত্র রাখিতে চাহে। (মেরকাত, হেদায়া ও শামী)। —ব্যাখ্যাকার
ইহাতে বুঝা গেল — (১) পাত্রী আগে দেখিয়া লওয়া ভাল। (২) পাত্রের মঙ্গলের খাতিরে পাত্রীর প্রকৃত দোষ বলা যায়।
