মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৬- জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫৬৬
১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৬। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ বড় প্রতিফল বড় বিপদের বিনিময়েই। আল্লাহ্ যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন তাহাদিগকে বিপদ দ্বারা পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে ইহাতে সন্তুষ্ট থাকে তাহার জন্য (আল্লাহ্) সন্তোষই রহিয়াছে এবং যে অসন্তুষ্ট হয়, তাহার জন্য অসন্তোষই রহিয়াছে। — তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইহজীবনে মানুষের দ্বারা নানারকম ভুল-ত্রুটি ও পাপাচার হয়ে যায়। তার ইবাদত- বন্দেগীতে অবহেলা হয়ে যায়। মানুষের সংগে আচার-আচরণে ভুল-ত্রুটি করে ফেলে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ ব্যবহার হয় না। নিআমতের নাশোকরী হয়ে যায়। প্রতিদিন কত রকমের পাপকর্ম হয়ে যায়, তার ইয়ত্তা নেই। বেশিরভাগই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। কোনও কোনওটি ধরেন। যেগুলো ধরেন সেগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার নীতি হল, কোনও না কোনও কৌশলে নেককার মুমিনদের তা থেকে পবিত্র করে ফেলা হয়। আল্লাহ তাওবার তাওফীক দেন, ফলে তাওবা করে সে তা থেকে পবিত্র হয়ে যায়। অথবা তাকে কোনও মুসিবতে ফেলেন এবং তাতে সবরের তাওফিক দেন। এর মাধ্যমেও তার গুনাহ মাফ হয়।
হাদীছে বলা হয়েছে, যতবড় পরীক্ষা ততবড় প্রতিদান। এটা অনেক বড় সুসংবাদ এবং স্বস্তিদায়ক কথা। মানুষ বিপদ-আপদ দেখে ভয় পায়। বিপদ যদি বড় হয়, তখন হতাশ হয়ে পড়ে। নিজেকে দুর্ভাগ্যবান মনে করে। অন্যকে আরামে থাকতে দেখে আক্ষেপ করে। মনে করে, সে কত সৌভাগ্যবান। তার কোনও বিপদ-আপদ নেই। এ হাদীছ জানাচ্ছে, বিপদ-আপদ দুর্ভাগ্যের বিষয় নয়। এটা আল্লাহর পরীক্ষা। পরীক্ষা যত কঠিন হয়, পুরস্কারও তত বড় হয়। তোমার যদি বড় বিপদ দেখা দেয়, তোমার কর্তব্য তাকে পরীক্ষা মনে করে সবর অবলম্বন করা। সবর করতে পারলে তোমার জন্য রয়েছে অনেক বড় পুরস্কার। তুমি স্বস্তি ও শান্তি কামনা করছিলে, তার বিপরীতে আল্লাহ বিপদ দিয়েছেন। তাতে তোমার খুশি হওয়া উচিত। তোমার জন্য তোমার নিজ পসন্দ অপেক্ষা আল্লাহর পসন্দ শ্রেয় বৈকি। তোমাকে পুরস্কৃত করার জন্যই তোমার কামনার বিপরীত অবস্থা তিনি দান করেছেন। সুতরাং সেই পুরস্কারপ্রাপ্তির আশায় মনে-প্রাণে সন্তুষ্ট থাক। এ সন্তষ্টি প্রকাশ বন্দেগীর উচ্চতর স্তর। এই স্তরে যদি উপনীত হতে না পার, অন্ততপক্ষে সবরই অবলম্বন কর। এর নিচে নামতে যেয়ো না অর্থাৎ অধৈর্য হয়ো না। তুমি চিন্তা করে দেখ, তোমাকে যদি দুনিয়ার আনন্দ উপভোগের ভেতর ছেড়ে দেওয়া হত, তবে হয়তো তুমি তাতে এমনভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়তে যে, তুমি প্রকৃত দাতাকে ভুলে যেতে অর্থাৎ আল্লাহ সম্বন্ধে গাফিল হয়ে যেতে, যেমনটা কাফির ও ফাসিকগণ হয়ে থাকে। আল্লাহ চান তুমি তাঁর অভিমুখী হয়ে থাক। তাই সে অভিমুখীতার পক্ষে যা-কিছু বাধা, অর্থাৎ আরাম ও বিলাসিতা, তিনি তা তোমার থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তোমাকে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্যে ফেলেছেন। এখন তোমার কর্তব্য তাঁর দিকে রুজু হওয়া ও তাঁকে ডাকা। এই যে তাঁর দিকে অভিমুখী হওয়ার সুযোগ তিনি তোমাকে করে দিয়েছেন, এও তো অনেক বড় নিআমত। এ নিআমতের জন্য তুমি শোকর আদায় কর এবং আল্লাহর ফয়সালাকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নাও। তা যদি মেনে নিতে পার তবে তোমার জন্য রয়েছে তাঁর সন্তুষ্টি। তিনি তোমাকে মুসিবতের এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফীক দান করবেন এবং আখিরাতে জান্নাতের নিআমত দ্বারা পুরস্কৃত করবেন। পক্ষান্তরে তুমি যদি আল্লাহর এ ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকতে না পার, তবে তা বড়ই দুর্ভাগ্যের কথা। তুমি তোমার অসন্তুষ্টি দ্বারা বিপদ তো দূর করতে পারবে না; বরং উল্টো আল্লাহর অসন্তোষের পাত্রে পরিণত হবে। ফলে বিপদ-আপদের বিনিময়ে কোনও পুরস্কার তো লাভ করবেই না, উল্টো দুনিয়ায়ও বিপদ-আপদ ভোগ করবে, আবার আল্লাহর অসন্তোষের পাত্র হয়ে আখিরাতেও শাস্তির উপযুক্ত হয়ে গেলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই গেল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও বিপদ-আপদ দেখা দিলে মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য তার পক্ষে তাকে কল্যাণকর মনে করা।
খ. যে গুনাহগার ব্যক্তি আরাম-আয়েশের জীবনযাপন করে তার কর্তব্য এই ভেবে সতর্ক হওয়া যে, এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাকে গুনাহে লিপ্ত থাকার অবকাশ দান কিনা।
গ. অন্যকে আরাম-আয়েশে থাকতে দেখে আক্ষেপ করা উচিত নয়; বরং নিজ কষ্টের কারণে আখিরাতে পুরস্কার লাভের জন্য আশান্বিত থাকা উচিত।
হাদীছে বলা হয়েছে, যতবড় পরীক্ষা ততবড় প্রতিদান। এটা অনেক বড় সুসংবাদ এবং স্বস্তিদায়ক কথা। মানুষ বিপদ-আপদ দেখে ভয় পায়। বিপদ যদি বড় হয়, তখন হতাশ হয়ে পড়ে। নিজেকে দুর্ভাগ্যবান মনে করে। অন্যকে আরামে থাকতে দেখে আক্ষেপ করে। মনে করে, সে কত সৌভাগ্যবান। তার কোনও বিপদ-আপদ নেই। এ হাদীছ জানাচ্ছে, বিপদ-আপদ দুর্ভাগ্যের বিষয় নয়। এটা আল্লাহর পরীক্ষা। পরীক্ষা যত কঠিন হয়, পুরস্কারও তত বড় হয়। তোমার যদি বড় বিপদ দেখা দেয়, তোমার কর্তব্য তাকে পরীক্ষা মনে করে সবর অবলম্বন করা। সবর করতে পারলে তোমার জন্য রয়েছে অনেক বড় পুরস্কার। তুমি স্বস্তি ও শান্তি কামনা করছিলে, তার বিপরীতে আল্লাহ বিপদ দিয়েছেন। তাতে তোমার খুশি হওয়া উচিত। তোমার জন্য তোমার নিজ পসন্দ অপেক্ষা আল্লাহর পসন্দ শ্রেয় বৈকি। তোমাকে পুরস্কৃত করার জন্যই তোমার কামনার বিপরীত অবস্থা তিনি দান করেছেন। সুতরাং সেই পুরস্কারপ্রাপ্তির আশায় মনে-প্রাণে সন্তুষ্ট থাক। এ সন্তষ্টি প্রকাশ বন্দেগীর উচ্চতর স্তর। এই স্তরে যদি উপনীত হতে না পার, অন্ততপক্ষে সবরই অবলম্বন কর। এর নিচে নামতে যেয়ো না অর্থাৎ অধৈর্য হয়ো না। তুমি চিন্তা করে দেখ, তোমাকে যদি দুনিয়ার আনন্দ উপভোগের ভেতর ছেড়ে দেওয়া হত, তবে হয়তো তুমি তাতে এমনভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়তে যে, তুমি প্রকৃত দাতাকে ভুলে যেতে অর্থাৎ আল্লাহ সম্বন্ধে গাফিল হয়ে যেতে, যেমনটা কাফির ও ফাসিকগণ হয়ে থাকে। আল্লাহ চান তুমি তাঁর অভিমুখী হয়ে থাক। তাই সে অভিমুখীতার পক্ষে যা-কিছু বাধা, অর্থাৎ আরাম ও বিলাসিতা, তিনি তা তোমার থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তোমাকে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্যে ফেলেছেন। এখন তোমার কর্তব্য তাঁর দিকে রুজু হওয়া ও তাঁকে ডাকা। এই যে তাঁর দিকে অভিমুখী হওয়ার সুযোগ তিনি তোমাকে করে দিয়েছেন, এও তো অনেক বড় নিআমত। এ নিআমতের জন্য তুমি শোকর আদায় কর এবং আল্লাহর ফয়সালাকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নাও। তা যদি মেনে নিতে পার তবে তোমার জন্য রয়েছে তাঁর সন্তুষ্টি। তিনি তোমাকে মুসিবতের এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফীক দান করবেন এবং আখিরাতে জান্নাতের নিআমত দ্বারা পুরস্কৃত করবেন। পক্ষান্তরে তুমি যদি আল্লাহর এ ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকতে না পার, তবে তা বড়ই দুর্ভাগ্যের কথা। তুমি তোমার অসন্তুষ্টি দ্বারা বিপদ তো দূর করতে পারবে না; বরং উল্টো আল্লাহর অসন্তোষের পাত্রে পরিণত হবে। ফলে বিপদ-আপদের বিনিময়ে কোনও পুরস্কার তো লাভ করবেই না, উল্টো দুনিয়ায়ও বিপদ-আপদ ভোগ করবে, আবার আল্লাহর অসন্তোষের পাত্র হয়ে আখিরাতেও শাস্তির উপযুক্ত হয়ে গেলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই গেল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও বিপদ-আপদ দেখা দিলে মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য তার পক্ষে তাকে কল্যাণকর মনে করা।
খ. যে গুনাহগার ব্যক্তি আরাম-আয়েশের জীবনযাপন করে তার কর্তব্য এই ভেবে সতর্ক হওয়া যে, এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাকে গুনাহে লিপ্ত থাকার অবকাশ দান কিনা।
গ. অন্যকে আরাম-আয়েশে থাকতে দেখে আক্ষেপ করা উচিত নয়; বরং নিজ কষ্টের কারণে আখিরাতে পুরস্কার লাভের জন্য আশান্বিত থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
