আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং: ৩৫৯৩
আন্তর্জতিক নং: ৩৮৭২

পরিচ্ছেদঃ ২১৪৬. হাবশায় হিজরত। আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের হিজরতের স্থান আমাকে (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রচুর বৃক্ষ আর সে স্থানটি ছিল দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী। তখন হিজরতকারীগণ মদীনায় হিজরত করলেন এবং যারা এর আগে হাবশায় হিজরত করেছিলেন তারাও মদীনায় ফিরে আসলেন। এ সম্পর্কে আবু মুসা ও আসমা (রাযিঃ) সূত্রে নবী কারীম (ﷺ) হতে হাদীস বর্ণিত আছে।

৩৫৯৩। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-জু‘ফী (রাহঃ) .... উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার (রাহঃ) উরওয়া ইবনে যুবায়েরকে বলেন যে, মিসওয়ার ইবনে মাখরামা এবং আব্দুর রহমান ইবনে আসওয়াদ ইবনে আব্দ ইয়াগুস (রাযিঃ) উভয়ই তাকে বললেন, (হে উবাইদুল্লাহ)! তুমি তোমার মামা উসমান (রাযিঃ)- এর সাথে তার (বৈপিত্রেয়) ভাই ওয়ালীদ ইবনে উকবা সম্পর্কে কোন আলাপ-আলোচনা করছ না কেন? জনগণ তার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছে। উবাইদুল্লাহ বলেন, উসমান (রাযিঃ) যখন নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসছিলেন তখন আমি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনার সাথে আমার কথা বলার প্রয়োজন আছে এবং তা আপনার মঙ্গলার্থেই। তিনি বললেন, ওহে, আমি তোমার থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তখন ফিরে আসলাম এবং যখন নামায সমাপ্ত করলাম, তখন মিসওয়ার ও ইবনে আব্দ ইয়াগুস (রাযিঃ)-এর নিকট যেয়ে বললাম, এবং উসমান (রাযিঃ)- কে আমি যা বলেছি এবং তিনি যে উত্তর দিয়েছেন তা উভয়কে শুনালাম।
তাঁরা বললেন, তোমার উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল তা তুমি আদায় করেছ। আমি তাদের নিকট বসাই আছি এ সময় উসমান (রাযিঃ)- এর পক্ষ থেকে একজন দূত আমাকে ডেকে নেয়ার জন্য আসলেন। তারা দু’জন আমাকে বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। আমি চললাম এবং উসমান (রাযিঃ)- এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি উপদেশ যা তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে বলতে চেয়েছিলে? তখন আমি কালিমা শাহাদত পাঠ করে (তাঁকে উদ্দেশ্য করে) বললাম, আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ)- কে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর আপনি ঐ দলেরই অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূল (ﷺ)- এর ডাকে সাড়া দিয়েছেন, আপনি তাঁর উপর ঈমান এনেছেন এবং প্রথম দু’হিজরতে (মদীনা ও হাবশা) আপনি অংশ গ্রহণ করেছেন, আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর স্বভাব-চরিত্র স্বচক্ষে দেখেছেন।
জনসাধারণ ওয়ালিদ ইবনে উকবার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা করছে, আপনার কর্তব্য তাঁর উপর বিধান দন্ড জারি করা। উসমান (রাযিঃ) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা, তুমি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে পেয়েছ? আমি বললাম, না, পাইনি। তবে তাঁর বিষয় আমার নিকট এমনভাবে নিরঙ্কুশ পৌঁছেছে যেমনভাবে কুমারী মেয়েদের নিকট পর্দার অন্তরালে সংবাদ পৌঁছে থাকে। উবাইদুল্লাহ (রাহঃ) বলেন, উসমান (রাযিঃ) কালিমা শাহাদত পাঠ করলেন, এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ)- কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আমিও ছিলাম। মুহাম্মাদ (ﷺ)- কে যা সহ প্রেরণ করা হয়েছিল আমি তার প্রতি ঈমান এনেছি। ইসলামের প্রথম যুগের দু’হিজরতে অংশ গ্রহণ করেছি যেমন তুমি বলছ। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাঁর হাতে বায়‘আত করেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাঁর নাফরমানী করিনি। তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়ে যায়।
তারপর আল্লাহ্ তাআলা আবু বকর (রাযিঃ)-কে খলীফা নিযুক্ত করলেন। আল্লাহর কসম আমি তাঁরও নাফরমানী করিনি, তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। অতঃপর উমর (রাযিঃ) খলীফা মনোনীত হলেন। আল্লাহর কসম, আমি তাঁরও অবাধ্য হইনি, তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। তিনিও ওফাত প্রাপ্ত হলেন এবং তারপর আমাকে খলীফা নিযুক্ত করা হল। আমার উপর তাদের বাধ্য থাকার যেরূপ হক ছিল তোমাদের উপর তাদের ন্যায় আমার প্রতি বাধ্য থাকার কি কোন হক নাই? উবাইদুল্লাহ বললেন, হ্যাঁ। অবশ্যই হক আছে। উসমান (রাযিঃ) বললেন, তাহলে এসব কথাবর্তা কি, তোমাদের পক্ষ থেকে আমার নিকট আসছে? আর ওয়ালীদ ইবনে উকবা সম্পর্কে তুমি যা বললে, সে ব্যাপারে আমি অতিসত্বর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব ইন্শাল্লাহ। অতঃপর তিনি ওয়ালীদকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করার রায় প্রদান করলেন এবং ইহা কর্যকরী করার জন্য আলী (রাযিঃ)- কে আদেশ করলেন। তৎকালে অপরাধীদেরকে শাস্তি প্রদানের দায়িত্বে আলী (রাযিঃ) নিযুক্ত ছিলেন। ইউনুস এবং যুহরির ভাতিজা যুহরী সূত্রে যে বর্ণনা করেন তাতে রয়েছে; ‘তোমাদের উপর আমার কি হক নেই যেমনটি হক ছিল তাদের জন্য।’


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন

সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৩৫৯৩ | মুসলিম বাংলা