আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১৮৩
৯৪- গােলামের প্রতিশােধ
১৮৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ হকসমূহ অবশ্যই হকদারদের নিকট পৌছাইয়া দেওয়া হইবে, এমন কি শিংবিহীন ছাগীকেও শিংওয়ালা ছাগীর নিকট হইতে প্রতিশােধ লইয়া দেওয়া হইবে।
بَابُ قِصَاصِ الْعَبْدِ
حَدَّثَنَا أَبُو الرَّبِيعِ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْعَلاَءُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لَتُؤَدُّنَّ الْحُقُوقَ إِلَى أَهْلِهَا، حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَمَّاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা হুকুকুল ইবাদ যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা অনুমান করা যায়। এখানে لتؤدن -এর আগে والله (আল্লাহর কসম) উহ্য আছে। এ কারণেই لتؤدن -এর শুরুতে তাকীদের ل (লাম) (যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার কসম করে বলছেন যে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেকের হক আদায় করিয়ে দেবেন। সেদিন কারও হক অনাদায় থাকবে না। দুনিয়ায় যদি কেউ কারও হক নষ্ট করে থাকে, তবে আখিরাতে তাকে তার বদলা দিতেই হবে। যার হক নষ্ট করা হয়েছে সে তার পুরোপুরি বদলা পেয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আখিরাতে তো কোনও টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদের কারবার নেই, যারা মারা যায় তারা এর সবকিছুই দুনিয়ায় রেখে যায়, তাহলে সেদিন একে অন্যের হক কিভাবে আদায় করবে?
এর জবাব অন্য এক হাদীছে আছে। তাতে জানানো হয়েছে, সেদিন পরস্পরের পাওনা আদায় হবে প্রথমত নেকীর দ্বারা, তারপর পাপ দ্বারা। অর্থাৎ প্রথমত হকদারকে তার হকের বদলে হক নষ্টকারীর নেকী দিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে হকদারদের হক আদায় করতে করতে যখন তার নেকী শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের হকের বদলে তাদের পাপ এ ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে নিজের পাপের সাথে অন্যের পাপের বোঝা যোগ হয়ে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, তার আর মুক্তির কোনও উপায় থাকবে না। ফলে জাহান্নামই হবে তার অবধারিত গন্তব্য।
মজলুমদের জন্য আশ্বাসবাণী
এটা যেমন হক নষ্টকারীর জন্য এক কঠিন সতর্কবাণী, তেমনি যাদের হক নষ্ট করা হয় সেই মজলূমদের জন্য এক আশ্বাসবাণীও বটে। কেননা দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। একদিন না একদিন শেষ হবেই হবে। কারও হক কোনওভাবে নষ্ট করা না হলে সে যে অনন্ত জীবন লাভ করবে এমন তো নয়। হাঁ এতটুকু কথা যে, হকসমূহ নষ্ট করা না হলে যতদিন বাঁচত ততদিন তার সুবিধা হত। হক নষ্ট হওয়ার ফলে সেই সুবিধাটুকু তার হল না। কিন্তু হক নষ্ট হওয়ার দ্বারা তার যে লাভ হবে, সে তুলনায় দুনিয়ার এ সুবিধা কিছুই নয়। কেননা তার যত হক নষ্ট করা হয়েছে, আখিরাতে এর বিনিময়ে সে বলতে গেলে প্রায় মুফতেই বিপুল ছাওয়াব পেয়ে যাবে। অসম্ভব নয় হয়তো তার নেকীর পাল্লায় কিছুটা টান ছিল, আর এ মুফতে পাওয়া নেকীর দ্বারা সেই টান পূর্ণ হয়ে গেল এবং এভাবে তার মুক্তির ব্যবস্থা হয়ে গেল। ভাবা যায় এটা কত বড় লাভ? এজন্যই কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, আখিরাতে পাওনাদারগণ আফসোস করে বলবে, আহা, দুনিয়ায় তার কোনও পাওনা যদি পরিশোধ না-ই করা হত!
হাশরে পশুদের পারস্পরিক জুলুমের বিচার
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হক আদায়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আমাদের জানান যে, মানুষ তো মানুষ, আখিরাতে এমনকি পশুদের মধ্যেও তাদের পারস্পরিক জুলুমের বিচার করা হবে। তাদেরও একের থেকে অন্যের হক আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। দুনিয়ায় এক পশু যদি অন্য পশুর ওপর জুলুম করে থাকে, তবে সেদিন সেই জুলুমেরও প্রতিশোধ নিয়ে দেওয়া হবে।
হয়তো এক শিংওয়ালা ছাগল শিংবিহীন ছাগলকে খামোখা গুঁতো মারল । শিং না থাকায় দুর্বল ছাগলটি তার বদলা নিতে পারল না। এ অবস্থায় আখিরাতে শিংবিহীন ছাগলটিকে শিং দিয়ে দেওয়া হবে আর বলা হবে, তোমাকে যেমন গুঁতো মেরেছিল। তেমনি তাকেও গুঁতো মেরে দাও। সে সমমাত্রার গুঁতো তাকেও মারবে। তারপর তাদেরকে মাটি করে ফেলা হবে। এভাবেই তাদের বিচার শেষ হবে। তাদের জন্য জান্নাত-জাহান্নাম নেই। মানুষের বেলায় যেহেতু জান্নাত-জাহান্নাম আছে, তাই তাদের বদলা আঘাত ও প্রত্যাঘাতের দ্বারা হবে না; বরং তা হবে পাপ-পুণ্যের বিনিময় দ্বারা।
উল্লেখ্য, পশুপাখির এ বিচার পুরস্কার-শাস্তিদান হিসেবে নয়; বরং কিসাস ও বদলা হিসেবে করা হবে।
এর দ্বারা বোঝা গেল হাশর কেবল মানুষেরই হবে না; বরং পশু-পক্ষীরও হবে।
মৃত্যুর পর মানুষসহ সব প্রাণীকেই পুনর্জীবিত করে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে। তারপর বিচারকার্য সম্পন্ন করে অন্য সকলকে মাটিতে পরিণত করা হবে এবং মানুষ ও জিনদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই যে পশুপাখির হাশর ও পুনরুত্থানের কথাটি বলা হল, এটি কুরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবেই জানানো হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ-
وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
এবং যখন বন্য পশুসমূহ (হাশরে) একত্র করা হবে। (সূরা তাকবীর (৮১), আয়াত ৫)
কুরআন-হাদীছ দ্বারা যখন স্পষ্টভাবেই তাদের হাশরের বিষয়টি জানা গেল, তখন এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা বান্দার হক আদায়ের বিষয়টি যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা অনুমান করা যায়। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব।
খ. যাদের কোনও হক কারও দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের উচিত আখিরাতে পুণ্য লাভের আশায় এ ব্যাপারে নমনীয়তা অবলম্বন করা।
গ. এ হাদীছ দ্বারা আখিরাত, পুনরুত্থান ও হাশরে বিচার সংঘটিত হওয়ার সত্যতা জানা যায়, যা ইসলামের একটি মৌলিক আকীদা।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা ন্যায়বিচারক। দুনিয়ায় কেউ কাউকে ঠকিয়ে নিস্তার পেলেও আখিরাতে সে বাঁচতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলার আদালতে তাকে ন্যায়বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে।
ঙ. আখিরাতে পশু-পাখিরও পুনরুত্থান ও বিচার হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আখিরাতে তো কোনও টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদের কারবার নেই, যারা মারা যায় তারা এর সবকিছুই দুনিয়ায় রেখে যায়, তাহলে সেদিন একে অন্যের হক কিভাবে আদায় করবে?
এর জবাব অন্য এক হাদীছে আছে। তাতে জানানো হয়েছে, সেদিন পরস্পরের পাওনা আদায় হবে প্রথমত নেকীর দ্বারা, তারপর পাপ দ্বারা। অর্থাৎ প্রথমত হকদারকে তার হকের বদলে হক নষ্টকারীর নেকী দিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে হকদারদের হক আদায় করতে করতে যখন তার নেকী শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের হকের বদলে তাদের পাপ এ ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে নিজের পাপের সাথে অন্যের পাপের বোঝা যোগ হয়ে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, তার আর মুক্তির কোনও উপায় থাকবে না। ফলে জাহান্নামই হবে তার অবধারিত গন্তব্য।
মজলুমদের জন্য আশ্বাসবাণী
এটা যেমন হক নষ্টকারীর জন্য এক কঠিন সতর্কবাণী, তেমনি যাদের হক নষ্ট করা হয় সেই মজলূমদের জন্য এক আশ্বাসবাণীও বটে। কেননা দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। একদিন না একদিন শেষ হবেই হবে। কারও হক কোনওভাবে নষ্ট করা না হলে সে যে অনন্ত জীবন লাভ করবে এমন তো নয়। হাঁ এতটুকু কথা যে, হকসমূহ নষ্ট করা না হলে যতদিন বাঁচত ততদিন তার সুবিধা হত। হক নষ্ট হওয়ার ফলে সেই সুবিধাটুকু তার হল না। কিন্তু হক নষ্ট হওয়ার দ্বারা তার যে লাভ হবে, সে তুলনায় দুনিয়ার এ সুবিধা কিছুই নয়। কেননা তার যত হক নষ্ট করা হয়েছে, আখিরাতে এর বিনিময়ে সে বলতে গেলে প্রায় মুফতেই বিপুল ছাওয়াব পেয়ে যাবে। অসম্ভব নয় হয়তো তার নেকীর পাল্লায় কিছুটা টান ছিল, আর এ মুফতে পাওয়া নেকীর দ্বারা সেই টান পূর্ণ হয়ে গেল এবং এভাবে তার মুক্তির ব্যবস্থা হয়ে গেল। ভাবা যায় এটা কত বড় লাভ? এজন্যই কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, আখিরাতে পাওনাদারগণ আফসোস করে বলবে, আহা, দুনিয়ায় তার কোনও পাওনা যদি পরিশোধ না-ই করা হত!
হাশরে পশুদের পারস্পরিক জুলুমের বিচার
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হক আদায়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আমাদের জানান যে, মানুষ তো মানুষ, আখিরাতে এমনকি পশুদের মধ্যেও তাদের পারস্পরিক জুলুমের বিচার করা হবে। তাদেরও একের থেকে অন্যের হক আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। দুনিয়ায় এক পশু যদি অন্য পশুর ওপর জুলুম করে থাকে, তবে সেদিন সেই জুলুমেরও প্রতিশোধ নিয়ে দেওয়া হবে।
হয়তো এক শিংওয়ালা ছাগল শিংবিহীন ছাগলকে খামোখা গুঁতো মারল । শিং না থাকায় দুর্বল ছাগলটি তার বদলা নিতে পারল না। এ অবস্থায় আখিরাতে শিংবিহীন ছাগলটিকে শিং দিয়ে দেওয়া হবে আর বলা হবে, তোমাকে যেমন গুঁতো মেরেছিল। তেমনি তাকেও গুঁতো মেরে দাও। সে সমমাত্রার গুঁতো তাকেও মারবে। তারপর তাদেরকে মাটি করে ফেলা হবে। এভাবেই তাদের বিচার শেষ হবে। তাদের জন্য জান্নাত-জাহান্নাম নেই। মানুষের বেলায় যেহেতু জান্নাত-জাহান্নাম আছে, তাই তাদের বদলা আঘাত ও প্রত্যাঘাতের দ্বারা হবে না; বরং তা হবে পাপ-পুণ্যের বিনিময় দ্বারা।
উল্লেখ্য, পশুপাখির এ বিচার পুরস্কার-শাস্তিদান হিসেবে নয়; বরং কিসাস ও বদলা হিসেবে করা হবে।
এর দ্বারা বোঝা গেল হাশর কেবল মানুষেরই হবে না; বরং পশু-পক্ষীরও হবে।
মৃত্যুর পর মানুষসহ সব প্রাণীকেই পুনর্জীবিত করে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে। তারপর বিচারকার্য সম্পন্ন করে অন্য সকলকে মাটিতে পরিণত করা হবে এবং মানুষ ও জিনদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই যে পশুপাখির হাশর ও পুনরুত্থানের কথাটি বলা হল, এটি কুরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবেই জানানো হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ-
وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
এবং যখন বন্য পশুসমূহ (হাশরে) একত্র করা হবে। (সূরা তাকবীর (৮১), আয়াত ৫)
কুরআন-হাদীছ দ্বারা যখন স্পষ্টভাবেই তাদের হাশরের বিষয়টি জানা গেল, তখন এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা বান্দার হক আদায়ের বিষয়টি যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা অনুমান করা যায়। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব।
খ. যাদের কোনও হক কারও দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের উচিত আখিরাতে পুণ্য লাভের আশায় এ ব্যাপারে নমনীয়তা অবলম্বন করা।
গ. এ হাদীছ দ্বারা আখিরাত, পুনরুত্থান ও হাশরে বিচার সংঘটিত হওয়ার সত্যতা জানা যায়, যা ইসলামের একটি মৌলিক আকীদা।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা ন্যায়বিচারক। দুনিয়ায় কেউ কাউকে ঠকিয়ে নিস্তার পেলেও আখিরাতে সে বাঁচতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলার আদালতে তাকে ন্যায়বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে।
ঙ. আখিরাতে পশু-পাখিরও পুনরুত্থান ও বিচার হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
