আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১৭
৮- পিতামাতাকে অভিশাপকারীর প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।
১৭। আবু তােফায়ল বলেন, হযরত আলী (রাযিঃ)-কে একথা প্রশ্ন করা হইল যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কি এমন কোন ব্যাপার বিশেষভাবে আপনাকে বলিয়াছেন, যাহা সাধারণভাবে সবাইকে তিনি বলেন নাই ? জবাবে হযরত আলী (রাযিঃ) বলিলেন ঃ অন্য কাহাকেও বলেন নাই এমন কোন বিশেষ কথা তাে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে বিশেষভাবে বলেন নাই; অবশ্য আমার তরবারীর কোষ মধ্যে রক্ষিত এ ব্যাপারটি ছাড়া। একথা বলিয়াই তিনি (তাহার কোষ মধ্যে রক্ষিত) একখানি লিপি বাহির করিলেন। উহাতে লিখা ছিল ঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অপর কাহারাে নামে পশু যবাই করে, তাহার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি জমির সীমানা-চিহ্ন চুরি করে, তাহার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি তাহার পিতামাতার প্রতি অভিসম্পাত করে, তাহার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি ধর্মে কোন নয়া আবিষ্কারের (বিদৃ'আতের) প্রশ্রয় দেয়, তাহার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ”
بَابُ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَرْزُوقٍ، قَالَ‏:‏ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ أَبِي بَزَّةَ، عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ قَالَ‏:‏ سُئِلَ عَلِيٌّ‏:‏ هَلْ خَصَّكُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِشَيْءٍ لَمْ يَخُصَّ بِهِ النَّاسَ كَافَّةً‏؟‏ قَالَ‏:‏ مَا خَصَّنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِشَيْءٍ لَمْ يَخُصَّ بِهِ النَّاسَ، إِلاَّ مَا فِي قِرَابِ سَيْفِي، ثُمَّ أَخْرَجَ صَحِيفَةً، فَإِذَا فِيهَا مَكْتُوبٌ‏:‏ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الأَرْضِ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দীন সম্পর্কে অজ্ঞতার দরুণ আমাদের দেশে অনেক লােকই পীর ফকীর আউলিয়াগণের নামে গরু-ছাগল ও শিন্নী মানত করে, অথচ তাহারা ঘুণাক্ষরেও জানিতে পারে না যে, পুণ্যকর্ম মনে করিয়া তাহারা যাহা করিতেছে, তাহা দ্বারাই তাহারা আল্লাহর লা'নতের পথে অগ্রসর হইতেছে।

বিদ'আত বা নব আবিষ্কৃত ধর্ম-বিধানসমূহ সম্পর্কে একথা প্রযােজ্য। কেননা, বিদ'আতী ব্যক্তি ঠিক ধর্মকর্ম মনে করিয়া যাহা করে, তাহাই তাহাকে আল্লাহর লা'নতের পথে ঠেলিয়া দেয় আর যখন দেখা যায় যে, কোন বিদ্আতী ব্যক্তি তাহার বিদ'আতের সমর্থন বা অনুসরণ না করার জন্য অন্য মুসলমানের মানহানি পর্যন্ত করিতে দ্বিধাবােধ করে না, তখন তাহার এই অন্ধত্বের জন্য সত্যই করুণার উদ্রেক হয়। অথচ এসব বিদ্আতী ব্যক্তির কাহাকেও নামায-রােযা ফরয-ওয়াজিব তরক করিতে দেখিয়াও এতটুকু কঠোরতা অবলম্বন করিতে দেখা যায় না।

বিদ্আত যে বর্জনীয় ও মন্দ কাজ, উহা মুখে সকলেই স্বীকার করেন, অথচ ‘ হাসানা’ ও ‘সায়্যিআ' তথা সুন্দর ও মন্দ এই দুইটি মনগড়া নামে অভিহিত করিয়া অনেকেই কার্যত এই বিদ'আতের মধ্যে লিপ্ত রহিয়াছেন। দ্বিতীয় সহস্র বৎসরের মুজাদ্দিদ হযরত শায়খ আহমাদ সরহিন্দী (মুজাদ্দিদে আলফেসানী [র]) এ সম্পর্কে লিখেনঃ

“এই ফকীর হক সুবহানুহু তা'আলার নিকট বড়ই বিনয় ও ক্রন্দনের সহিত দু'আ করে যে, দীনের মধ্যে যে সমস্ত নূতন বিষয় আমদানী করা হইয়াছে যাহা রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁহার খলীফাগণের সময় মওজুদ ছিল না-এরূপ যে সমস্ত বিদ'আত আবিষ্কার করা হইয়াছে যদিও উহা আলােকের দিক হইতে ঊষাকালীন শুভ্রতার ন্যায় দৃষ্ট হয় তবুও এই ফকীরকে যেন উহা হইতে বাঁচাইয়া রাখেন।.....

“তাহারা বলিয়া থাকে যে, বিদ'আত দুই প্রকারের--হাসানা ও সাইয়েয়া; এই ফকীর উক্ত বিদ্আতগুলির মধ্য হইতে কোনটিতেই সৌন্দর্য ও নূরানী কিছু অবলােকন করে না এবং অন্ধকার ও কদর্যতা ব্যতিরেকে ইহাদের মধ্যে কিছুই অনুভব করে না। সাইয়্যেদুল বাশার (সা) ফরমাইয়াছেনঃ

***
“যাহারা আমাদের দীনের মধ্যে এমন কিছু আমদানী করে যাহা উহাতে নাই, উহা বর্জনীয়। কাজেই যাহা বর্জনীয়, তাহা আবার সৌন্দর্য কি প্রকারে হইতে পারে ?

***
“তােমরা নিজদিগকে ধর্মকর্মের ব্যাপারে নব-উদ্ভাবিত বিষয়গুলি হইতে রক্ষা কর; কেননা, প্রত্যেক নব-উদ্ভূত ব্যাপারই বিদ্আত এবং বিদআত মাত্রই গােমরাহী।” এমতাবস্থায় বিদ্'আতের মধ্যে সৌন্দর্যের কী অর্থ ? (মকতুব, ১৩৬, দফতর ঃ১)

(বিস্তারিত জানার জন্য মাওলানা আবদুল আযীয (র) প্রণীত “হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী” পৃ. ৩৩৭-৩৮ দ্রষ্টব্য)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ১৭ | মুসলিম বাংলা