আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং:
২- মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার।
৪। আতা ইবন ইয়াসার (রাযিঃ) বলেন ঃ এক ব্যক্তি হযরত ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-এর খেদমতে হাযির হইয়া আরয করিল, আমি একটি রমণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে তাহাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিল। অতঃপর এক ব্যক্তি তাহাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল এবং সে ঐ প্রস্তাব পছন্দ করিল। ইহাতে আমার আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগিল এবং আমি তাহাকে রাগের মাথায় হত্যা করিয়া বসিলাম। আমার জন্য কি তাওবার মাধ্যমে উক্ত পাপ হইতে নিষ্কৃতি লাভের কোন সুযােগ আছে ? তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন ? তােমার মাতা কি জীবিত আছেন? সে ব্যক্তি বলিল ঃ জ্বী না। তিনি বলিলেন ঃ তুমি আল্লাহর নিকট তাওবা কর এবং যথাসাধ্য ইবাদত ও নফল কার্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও!

রাবী আতা ইবন ইয়াসার (রাযিঃ) বলেন ঃ তখন আমি হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) এর নিকট গিয়া জিজ্ঞাসা করিলামঃ হুযুর! তাহার মাতা জীবিত কি না, এ কথা আপনার জিজ্ঞাসা করার হেতু কি? তিনি বলিলেনঃ মাতার সহিত সদ্ব্যবহারের চাইতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রকৃষ্টতর কোন কার্য আমার জানা নেই।
بَابُ بِرِّ الأُمِّ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ‏:‏ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي كَثِيرٍ قَالَ‏:‏ أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّهُ أَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ‏:‏ إِنِّي خَطَبْتُ امْرَأَةً، فَأَبَتْ أَنْ تَنْكِحَنِي، وَخَطَبَهَا غَيْرِي، فَأَحَبَّتْ أَنْ تَنْكِحَهُ، فَغِرْتُ عَلَيْهَا فَقَتَلْتُهَا، فَهَلْ لِي مِنْ تَوْبَةٍ‏؟‏ قَالَ‏:‏ أُمُّكَ حَيَّةٌ‏؟‏ قَالَ‏:‏ لاَ، قَالَ‏:‏ تُبْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَتَقَرَّبْ إِلَيْهِ مَا اسْتَطَعْتَ‏.‏ فَذَهَبْتُ فَسَأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ‏:‏ لِمَ سَأَلْتَهُ عَنْ حَيَاةِ أُمِّهِ‏؟‏ فَقَالَ‏:‏ إِنِّي لاَ أَعْلَمُ عَمَلاً أَقْرَبَ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ بِرِّ الْوَالِدَةِ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসের দ্বারা বােঝা গেল যে, মাতার সহিত সদ্ব্যবহার এমনি একটি পুণ্যকর্ম যাহা নরহত্যার জঘন্য গােনাহুরও কাফফারা হইতে পারে। হযরত ইব্‌ন উমর (রা) বর্ণিত একটি হাদীসে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বরাতে বর্ণিত আছে যে, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (সা)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া আরয করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দ্বারা একটি জঘন্য পাপকার্য সংঘটিত হইয়া গিয়াছে। এখন আমার তাওবার কোন ব্যবস্থা আছে কি? জবাবে নবী করীম (সা) ফরমাইলেন ঃ তােমার মাতা কি এখনও জীবদ্দশায় আছেন? সে ব্যক্তি বলিল, জ্বী না, তবে আমার খালা এখনও বাচিয়া আছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) ফরমাইলেন ঃ তবে তাঁহার সহিত সদ্ব্যবহার করিবে। তিরমিযী বর্ণিত এ হাদীসখানা সম্পর্কে প্রখ্যাত হাদীসবেত্তা ইবন হিব্বান ও হাকিম (র) ইমাম বুখারী ও মুসলিমের নির্ধারিত বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন।

এই মারফু হাদীসের ইবন আব্বাস (রা) বর্ণিত মাওকুফ হাদীসের মর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়া গেল।

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ফরমান ঃ আমি যখন বেহেশতে যাই (মি'রাজ-রজনীতে ঃবেহেশতে গমনের ইঙ্গিত); তখন জনৈক কারীর কিরাআতের আওয়াজ আমার কানে পৌছিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম যে, এই কিরাআতের আওয়াজ কাহার-জবাব পাওয়া গেল, হারিসা ইন নু'মানের এই ঘটনা বর্ণনার পর নবী করীম (সা) ফরমাইলেনঃ তােমরাও এরূপ সদাচারী হও! তােমরাও এরূপ সদাচারী হও! কেননা, সে তাহার মায়ের সহিত অন্যদের তুলনায় অধিকতর সদাচারী ছিল। শারহুস সুন্নাহ ও বায়হাকী-বর্ণিত এই হাদীসখানা দ্বারাও একথার প্রমাণ যাইতেছে যে, মাতার সহিত সদ্ব্যবহার এমন একটি পুণ্যকর্ম যদ্বারা বেহেশত পাওয়া যাইবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ৪ | মুসলিম বাংলা