আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৯৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৯৫
মু’মিনের সংসর্গ।
২৩৯৮. সওয়ায়দ ইবনে নসর (রাহঃ) ..... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ মু‘মিন ছাড়া কারো সঙ্গী হয়ো না আর মুত্তাকী ব্যক্তি ছাড়া তোমার খানা যেন কেউ না খায়।
باب مَا جَاءَ فِي صُحْبَةِ الْمُؤْمِنِ
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ حَيْوَةَ بْنِ شُرَيْحٍ، حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ غَيْلاَنَ، أَنَّ الْوَلِيدَ بْنَ قَيْسٍ التُّجِيبِيَّ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، قَالَ سَالِمٌ أَوْ عَنْ أَبِي الْهَيْثَمِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، - أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে প্রথমত মুমিন ছাড়া অন্য কাউকে অর্থাৎ কাফের-মুশরিককে সঙ্গী বানাতে এবং তাদের সঙ্গে মৈত্রী ও বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটা ঈমানেরই দাবি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ
‘যেসব লোক আল্লাহ ও আখেরাত দিবসে ঈমান রাখে, তাদেরকে তুমি এমন পাবে না যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখছে। হোক না তারা তাদের পিতা বা তাদের পুত্র বা তাদের ভাই কিংবা তাদের স্বগোত্রীয়। তারাই এমন, আল্লাহ যাদের অন্তরে ঈমানকে খোদাই করে দিয়েছেন।২৪৬

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

‘হে মুমিনগণ! ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরাই একে অন্যের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে হিদায়াত দান করেন না।২৪৭

কাফের-মুশরিককে বন্ধু বানানো যেমন ইসলামী রাষ্ট্র ও জাতির পক্ষে ক্ষতিকর, তেমনি ক্ষতিকর ব্যক্তির ঈমান ও আমল-আখলাকের পক্ষেও। মানুষের স্বভাবই হলো অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ও অন্যের অনুকরণ করা। কাজেই কাফের-মুশরিককে বন্ধু বানালে তাদের কুফরী আখলাক-চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। তাদের দেখাদেখি জীবনাচারেও পরিবর্তন ঘটে। যারা অমুসলিমদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করেছে, ব্যাপকভাবেই তাদেরকে দেখা গেছে যে, তারা সুন্নতের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে তাদের কৃষ্টি-কালচারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাদের জীবনবোধও মারাত্মকভাবে ক্ষয়ে গেছে। তাওহীদ, নবীপ্রেম, আখেরাতমুখিতা প্রভৃতি ঈমানী চিন্তা-চেতনার স্থলে তারা ভোগবাদী জীবন রপ্ত করে নিয়েছে। কোনও মুমিন যাতে এ পরিণতির শিকার না হয়, সেজন্যই সতর্ক করা হয়েছে যেন কোনও অমুসলিম বা দীনবিমুখ ব্যক্তিকে কিছুতেই বন্ধু বানানো না হয়।

হাদীছটির দ্বিতীয় হুকুম হলো মুত্তাকী-পরহেযগার ছাড়া অন্য কাউকে খানা না খাওয়ানো। এর দ্বারা দাওয়াত খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে, ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর কথা নয়। অন্যান্য হাদীছে স্পষ্টই জানানো হয়েছে যে-কোনও ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো ছাওয়াবের কাজ। এমনকি পশু-পাখিকেও। এক হাদীছে আছে-

فِي كُلِّ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ

‘প্রত্যেক তাজা কলিজা-বিশিষ্টকে খাওয়ানোর মধ্যে ছাওয়াব আছে।২৪৮

সুতরাং ক্ষুধার্তকে অনুদানের ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিমের কোনও ভেদাভেদ নেই। ইসলামের শিক্ষায় যে-কোনও ক্ষুধার্তকে খাবার দেওয়া ও পিপাসার্তকে পানি দেওয়া অবশ্যকর্তব্য। এ হাদীছে দাওয়াত ও আতিথেয়তার খাবার কেবল মুত্তাকীকেই খাওয়াতে বলা হয়েছে। কেননা খানা খাওয়ানোর দ্বারা পরস্পরে মহব্বত ও হৃদ্যতার সৃষ্টি হয়। ফাসেক বেদুঈন লোকের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক সমীচীন নয়। তাতে ঈমান ও আমল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অবশ্য কাউকে দীনের প্রতি আকৃষ্ট করা ও ঈমান- আমলের দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্র তৈরির উদ্দেশ্যে খাওয়ানো হলে সেটা আলাদা কথা। হাদীছটির সারকথা হলো, যে ব্যক্তি মুত্তাকী-পরহেযগার নয় তার সঙ্গে উঠাবসা করো না, তার সঙ্গে মিলে খাওয়া-দাওয়া করো না এবং তাকে সঙ্গী বানিও না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুক্তাকী-পরহেযগার ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব ও মেলামেশা করা উচিত নয়।

খ. অন্নদান সবাইকে, কিন্তু আদর-আপ্যায়ন করা চাই কেবল মুত্তাকী-পরহেযগারকেই।

২৪৬. সূরা মুজাদালাহ (৫৮), আয়াত ২২

২৪৭. সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৫১

২৪৮. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৩৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২২৪৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫৫০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭০৭৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪২
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান