কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৮৬৭
আন্তর্জাতিক নং: ৪৯৫১
৬৭. নাম পরিবর্তন করা সস্পর্কে।
৪৮৬৭. মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনে তালহার জন্মের পর তাকে নিয়ে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হই। তিনি তখন আবা (বিশেষ জামা) পরিহিত অবস্থায় তাঁর উটের শরীরে ঔষধ লাগাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কাছে খেজুর আছে কি? আমি বলি, হ্যাঁ। তখন আমি তাঁকে কিছু খেজুর দিলে, তিনি তা চিবিয়ে সে বাচ্চার মুখে দেন। ফলে বাচ্চাটি মুখ নাড়াতে থাকে। তখন নবী (ﷺ) বলেন, আনসারগণ খেজুর পছন্দ করে। এরপর তিনি সে ছেলের নাম রাখেন আব্দুল্লাহ।
باب فِي تَغْيِيرِ الأَسْمَاءِ
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ ذَهَبْتُ بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حِينَ وُلِدَ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي عَبَاءَةٍ يَهْنَأُ بَعِيرًا لَهُ قَالَ " هَلْ مَعَكَ تَمْرٌ " . قُلْتُ نَعَمْ - قَالَ - فَنَاوَلْتُهُ تَمَرَاتٍ فَأَلْقَاهُنَّ فِي فِيهِ فَلاَكَهُنَّ ثُمَّ فَغَرَ فَاهُ فَأَوْجَرَهُنَّ إِيَّاهُ فَجَعَلَ الصَّبِيُّ يَتَلَمَّظُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " حِبُّ الأَنْصَارِ التَّمْرُ " . وَسَمَّاهُ عَبْدَ اللَّهِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইবন মাজাহ শরীফের এক বর্ণনায় হযরত আবূ তালহা রাযি. ও উন্মু সুলায়ম রাযি. এর বিবাহের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান জন্ম দিলেন। আবূ তালহা রাযি. তাকে বেজায় ভালোবাসতেন। শিশুটি বড় হয়ে উঠল এবং দৌড়াদৌড়ির বয়সে পৌঁছাল। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাতে আবূ তালহা রাযি. ভীষণ শোকাতর হয়ে পড়েন। তিনি সকাল সন্ধ্যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন। এক সন্ধ্যায় তিনি যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যান, তখন শিশুটির মৃত্যু হয়ে যায়। তারপর বাড়ি ফিরে যথারীতি শিশুটির খোঁজখবর নিলেন। তার মা উম্মু সুলায়ম রাযি জানালেন, সে আগের তুলনায় শান্ত আছে।

উম্মু সালামা রাযি. যে বললেন শান্ত আছে, তার মানে এর আগে অসুখে কষ্ট পাচ্ছিল। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। এখন তার মৃত্যু হয়ে গেছে। সেই কষ্ট-ক্লেশ ও যন্ত্রণা নাই। মৃত্যুর মাধ্যমে শান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আবূ তালহা রাযি. বুঝেছিলেন সে আগের তুলনায় সুস্থ আছে। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. চাচ্ছিলেন আবূ তালহা রাযি. তাই বুঝুক। আগেই বলা হয়েছে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন। অসাধারণ ধৈর্যশীলা। ছিলেন। তাঁর তো জানা ছিল আবূ তালহা রাখি, তাঁর এই শিশুপুত্রকে কতটা ভালোবাসেন। হঠাৎ মৃত্যুসংবাদ শুনলে তাঁর পক্ষে তা সহ্য করা কঠিন হবে। তাই হঠাৎ করে শোকসংবাদ না জানিয়ে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থাকলেন। তাকে রাতের খাবার দিলেন। তাঁর অন্যসব প্রয়োজন মেটালেন। তারপর আবূ তালহা রাখি, যখন সম্পূর্ণ শান্ত ও পরিতপ্ত হয়ে গেলেন, তখন একটা ভূমিকা দিয়ে মৃত্যুসংবাদ জানালেন। ভূমিকাটি বড় কৌতূহলোদ্দীপক। 'ধার'-এর যুক্তি উত্থাপন করলেন। হাঁ, ধারই তো। সকল বাবা-মায়ের পক্ষে তাদের সন্তান-সন্ততি আল্লাহর দেওয়া ধার। আল্লাহই তাদের সৃষ্টিকর্তা এবং আল্লাহই মালিক। তিনি যখন তাদের মালিক, তখন যে-কোনও সময় তার তাদেরকে ফেরত নেওয়ারও অধিকার আছে। পিতা-মাতার তাতে আপত্তি করার কোনও হক নেই । অখণ্ডনীয় এ যুক্তি শোনার পর কারও ধৈর্যহারা হওয়ার অবকাশ থাকে না। এখানেও তাই হল। হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি. খানিকটা রাগ করলেও অধৈর্যের কোনও কাজ করেননি। খুশিমনে তিনি আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেন এবং শান্তভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে গোটা বৃত্তান্ত জানান।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আয় হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও আবূ তালহা রাযি. দম্পতির এক পুত্রসন্তান জন্ম নিল। তার নাম রাখা হল আব্দুল্লাহ। হযরত আনাস রাযি.-এর বৈপিত্রেয় ভাই। উভয়ের মা উম্মু সুলায়ম রাযি., কিন্তু পিতা ভিন্ন। হযরত আনাস রাযি.-এর পিতা উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রাক্তন স্বামী মালিক ইবনুন নাযর আর আব্দুল্লাহর পিতা তাঁর বর্তমান স্বামী আবূ তালহা রাযিয়। উম্মু সুলায়ম রাযি. আনাস রাযি.-কে দিয়ে আব্দুল্লাহকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সংগে 'তাহনীক'-এর জন্য কিছু খেজুর দিলেন।

তাহনীক করা মানে খেজুর বা এ জাতীয় কিছু চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের তালুতে লাগিয়ে দেওয়া। খেজুর একটি বরকতময় ফল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছকে মু'মিন ব্যক্তির সংগে তুলনা করেছেন। খেজুর দ্বারা অহনীক করা হয় এই উদ্দেশ্যে, যাতে এর বরকতে আল্লাহ তা'আলা শিশুকে ঈমানদার বানান। তাছাড়া একটি সুমিষ্ট ফল হওয়ায় এর তাহনীক উপকারীও বটে। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহনীক করলেন এবং তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ।

আব্দুল্লাহ মানে আল্লাহর বান্দা। হাদীছমতে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম। তারপর সেরা নাম আব্দুর রহমান। তারপর আল্লাহর যে-কোনও নামের সংগে যুক্ত করে নাম রাখা উত্তম। নবীদের নামে নামকরণ করতেও উৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুর উপর নামের আছর পড়ে থাকে। তাই অভিভাবকের কর্তব্য শিশুর সুন্দর নাম রাখা। সেই নামই সুন্দর, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা মোতাবেক হয়।

আব্দুল্লাহ বড় হয়েছিলেন এবং দীনের শিক্ষা লাভ করে অনেক বড় মুহাদ্দিছ হয়েছিলেন। তিনি পিতার সূত্রে হাদীছও বর্ণনা করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আর বরকতে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও আবূ তালহা রাযি. দম্পতির আব্দুল্লাহ ছাড়াও আরও কয়েকজন পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল। পুত্রগণ হলেন, ইসহাক, ইসমাঈল, ইয়া'কুব, উমর, কাসিম, উমারা, ইবরাহীম, ‘উমায়র, যায়দ ও মুহাম্মাদ। আর কন্যা ছিল চারজন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৪৮৬৭ | মুসলিম বাংলা