প্রবন্ধ
বছরের অন্যান্য মাসের মধ্যে মাহে রমযানের অবস্থান আলাদা। এ মাসের আছে এমন কিছু বিশিষ্টতা, যা অন্যান্য মাসের নেই। ঐসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যতই চিন্তা করা যায় ততই এ মাসের মহিমা ও গুরুত্ব প্রকাশিত হয়।
প্রথম বিশিষ্টতা এই যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এমাসের বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করেছেন। এটা ঠিক যে, কুরআন মাজীদে ‘আশহুরে হুরুমে’রও উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে (তরজমা) ‘মাসের সংখ্যা আল্লাহর নিকট বারো...। তন্মধ্যে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। (সূরা তাওবা ৯ : ৩৬)
এ চার মাস হল রজব, যিলকদ, যিলহজ্ব ও মুহাররম। যদিও চার সম্মানিত মাস বলতে এই মাসগুলিই সুবিদিত এবং হাদীসের বর্ণনা অনুসারে এখানে এ চার মাসকেই বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এ মাসগুলির নাম কুরআন মাজীদে উল্লেখিত হয়নি। এদিক থেকে মাহে রমযান বিশিষ্টতার অধিকারী। মাহে রমযানের নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা এর ফযীলত ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ
অর্থাৎ, মাহে রমাযান, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং (যা আসমানী) হেদায়েত ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী (সূরা বাকারা ২ : ১৮৫)
দ্বিতীয় বিশিষ্টতা, কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত বিভিন্ন ফযীলত। কুরআন মাজীদে ও হাদীস শরীফে রমযান মাসের যে ফযীলতগুলো উল্লেখিত হয়েছে তা মূলত দু’ধরনের : ১. তাকভীনী ২. তাশরীয়ী। ‘তাকভীন’ ও ‘তাশরী’ শব্দ দুটি আরবী। দুটো শব্দই আল্লাহ তাআলার আদেশ ও ফয়সালা নির্দেশ করে। তবে দু’ধরনের আদেশ। আল্লাহ তাআলার বিধানমূলক বা করণীয়-বর্জনীয় সংক্রান্ত আদেশকে তাশরীয়ী আদেশ বলে। যেমন ঈমান আনা ও শিরক ও কুফর বর্জনের আদেশ সালাত ও যাকাতের আদেশ, সওম ও সাদাকার আদেশ ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে তাশরীয়ী বিধান বা বান্দার করণীয়-বর্জনীয় সংক্রান্ত বিধান। পক্ষান্তরে যেসকল আদেশ ও ফয়সালা বান্দার কর্তব্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং সৃজন, বর্ধন মর্যাদা ও বিশিষ্টতা দান, লালন ও বিলুপ্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেগুলোকে বলা হয় তাকভীনী ফয়সালা। যেমন আল্লাহর আদেশেই মানুষের জীবন, আল্লাহর আদেশেই মৃত্যু। আল্লাহর আদেশেই সুস্থতা, অসুস্থতা, সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ, সম্মান-অসম্মান ইত্যাদি সব কিছু। তাঁরই আদেশে উত্থান-পতন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন তথা বিশ্বজগতের সবকিছু। আল্লাহ তাআলার এই আদেশ ও ফয়সালাকে বলে তাকভীনী আদেশ।
মাহে রমাযানের যেসব ফযীলত কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে ঘোষিত হয়েছে তাতে যেমন তাকভীনী বিষয় আছে তেমনি আছে তাশরীয়ী বিষয়। তাকভীনী বিষয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা এই মাসকে নির্ধারিত করেছেন তাঁর মহিমান্বিত কালাম নাযিলের জন্য, যা জগদ্বাসীর জন্য হেদায়েত এবং হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী। আর এ মোবারক মাসে একটি রজনীকে এমন মর্যাদা ও মহিমা দান করেছেন যে, তা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ দুই বৈশিষ্ট্য কুরআন মাজীদে পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত হয়েছে। আর হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাআইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة وغلقت ابواب جهنم وصفدت الشياطين
যখন মাহে রমাযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯)
এই হাদীস শরীফও সংবাদ দান করে যে, এ মাসে উর্ধ্ব জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সকল নেয়ামতের স্থান জান্নাতের দরজাসমূহ আল্লাহর আদেশে খুলে দেওয়া হয়। আর চির অশান্তির স্থান জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। এ যেন পরওয়ারদেগারের আহবান -কে আছ, জান্নাতে যেতে চাও, আমি তাকে জান্নাতে দাখিল করব। কে আছ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চাও, আমি তাকে মুক্তি দান করব। অতএব বান্দার কর্তব্য গুনাহ ও পাপাচার থেকে পবিত্র হয়ে চিরমুক্তির পরওয়ানা হাসিল করা। বিতাড়িত শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে অন্যায় অনাচারের এক বড় সূত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোটকথা গোটা মাসজুড়ে রহমত ও মাগফিরাতের ফল্গূধারা প্রবাহিত হয় এবং মুক্তির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে। এগুলি হচ্ছে এই মোবারক মাসের তাকভীনী বৈশিষ্ট্য যা তাশরীয়ী বিধানসমূহ পালনে সহায়ক হয়।
এ মাসের তাশরীয়ী বৈশিষ্ট্য কী? এ মাসের তাশরীয়ী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সওম ও তারাবী এ মাসে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। সূরা বাক্বারার যে আয়াতে মাহে রমযানের ফযীলত ঘোষিত হয়েছে তার আগের দু’টি আয়াতই হচ্ছে সওমসংক্রান্ত ঐ প্রসিদ্ধ আয়াত, যা এ মাসে মিম্বরে মিম্বরে পঠিত হয়-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে রোযা, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা আত্মরক্ষা করতে পার। (গুনাহ থেকে এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে এ মাসে উপস্থিত হয় সে যেন মাসভর রোযা রাখে। (সূরা বাক্বারা ২:১৮৫)
অসুস্থ ও মুসাফির ছাড়া প্রত্যেক বালিগ মুসলিমের উপর সারা মাস রোযা রাখা ফরয। এ শুধু মাহে রমাযানেরই বৈশিষ্ট্য। এ বিধান অন্য কোনো মাসে নেই।
সূরা বাকারার যে আয়াতগুলিতে রোযা ফরয হওয়ার বিধান এসেছে তাতে চিন্তা করলে দেখা যায়, একদিকে আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন, অন্যদিকে অপারগতার ক্ষেত্রে অবকাশ দিয়ে এ বিধানকে সহজ করেছেন। উপরন্তু দয়াময় মালিক এ বিষয়ে এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, বান্দার জন্য তা আর কঠিন থাকেনি, মধুময় হয়ে উঠেছে।
মাহে রমাযানের দ্বিতীয় বিশেষ ইবাদত তারাবী। বলাবাহুল্য, এ-ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতেই প্রদত্ত। তবে দয়াময় মালিক তা দান করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্র মাধ্যমে এবং রোযার মতো একে ফরয করেননি। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এক রমাযানে দুই বা তিন রাত সাহাবীগণ তারাবীর নামাযে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ইকতেদা করেছেন। অর্থাৎ তারাবীর নামায জামাতে পড়া হয়েছে। কিন্তু পরের রাতগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বের হননি। এর কারণ দর্শিয়ে তিনি বলেছেন, তোমাদের অপেক্ষা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম, কিন্তু আমার আশঙ্কা হয়েছে (এভাবে জামাতে তারাবী চলতে থাকলে) তা ফরয করে দেওয়া হতে পারে।’
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযকে আমাদের জন্য অপরিহার্য করেননি তবে তিনি উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমযানের রাতে (নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯)
‘ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে’ কথাটির মূল অর্থ, বিশ্বাসের সাথে, পুণ্যের আশায়। তো এ দু’টি ইবাদত অর্থাৎ রোযা ও তারাবী হচ্ছে মাহে রমযানের বিশেষ ইবাদত। রমযান ছাড়া অন্য কোনো মাসের রোযাকে আল্লাহ তাআলা ফরয করেননি। তেমনি অন্য কোনো মাসে তারাবী পড়ারও সুযোগ নেই।
তৃতীয় বিষয়টি সাধারণ। তা হচ্ছে গোনাহ ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা। অন্য মাসেও তা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মাহে রমযানে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। তেমনি সাধারণ ইবাদত-বন্দেগী ও আমলে ছালিহ সব সময়ই প্রশংসনীয়। কিন্তু মাহে রমাযানে এর ফযীলত অনেক বেড়ে যায়। অতএব সাধারণ ইবাদত-বন্দেগীর বিষয়ে আরো বেশি যত্নবান হওয়া এবং গুনাহ ও পাপাচার থেকে আরো গুরুত্বের সাথে বেঁচে থাকা এ মাসের করণীয়ের মাধ্যে শামিল।
মাহে রমাযানের গুরুত্বের আরেকটি দিক হচ্ছে, এটি ‘শাআইরে ইসলাম’ বা ইসলামের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। রোযার চাঁদ দেখা ও তার ঘোষণা, মসজিদে মসজিদে পয়লা রমাযান থেকেই সম্মিলিত তারাবী, সমাজের সক্ষম ও প্রাপ্ত-বয়স্ক নারী পুরুষের রোযা পালন, সাহরী ও ইফতার সব মিলিয়ে তা একটি প্রকাশ্য ও সম্মিলিত রূপ লাভ করে। রোযার মূল কাজ যদিও সম্পাদনমূলক নয় বর্জনমূলক অর্থাৎ পানাহার বর্জন, তাই মূল কাজটি দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। অন্য মাসের সাথে এ মাসের পরিবর্তনটা বেশ চোখে পড়ে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে মাহে রমযান ইসলামের অন্যতম শি‘আর হওয়া পরিষ্কার হয়ে যায়।
কুরআন মাজীদে ‘আশহুরে হুরুম'কে শি‘আর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আশহুরে হুরুমের মূল বৈশিষ্ট্য দু’টি : এক. প্রাচীনকাল থেকেই এ মাসগুলিতে যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তপাত নিষিদ্ধ থাকা। বলাবাহুল্য, এটি একটি বর্জনমূলক বিষয়। দুই. আশহুরে হজ্ব বা হজ্বের মূল মাসগুলি আশহুরে হুরুমের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, যিলক্বদ, যিলহজ্ব। আর হজ্ব সম্মিলিতভাবে সম্পাদনমূলক একটি ইবাদত। মোটকথা, শরীয়তের নীতিমালার অলোকে মাহে রমাযান শা‘আইরে ইসলামের অন্তুর্ভুক্ত। অতএব এ মাসের মর্যাদা রক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
শাআইর বা আল্লাহ তাআলার বন্দেগীর নিদর্শনসমূহের বিষয়ে কুরআন মজীদে বলা হয়েছে-
ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
‘আর যারা আল্লাহ তাআলার (ইবাদতের) নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে এ (তাদের) অন্তরের খোদাভীতি থেকে উৎসারিত।’ (সূরা হজ্ব : ২২ : ৩২)
মাহে রমযানের মর্যাদা কীভাবে অক্ষুণ্ণ রাখা যাবে
এ মাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রথম করণীয়, আল্লাহ তাআলা এ মাসে ইবাদতের যে বিধান দিয়েছেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইবাদত সুন্নাহ করেছেন, অর্থাৎ রোযা ও তারাবী তা যথাযথভাবে আদায়ে সচেষ্ট হওয়া।
২. শরীয়তসম্মত ওযরবশত পানাহার করতে হলে প্রকাশ্যে না করা।
চিন্তা করার বিষয় এই যে, অনেক ক্ষেত্রে শরীয়তে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইমীন’(রোযাদারগণের সাদৃশ্য গ্রহণ)-এর বিধান আছে। এর তাৎপর্য রমাযানের মর্যাদা রক্ষা করা। যেমন মুসাফিরের জন্য রোযা না-রাখার অবকাশ থাকলেও কোনো মুসাফির যদি দিনের বেলা মুকীম হয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য, অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা। এতে কি রোযা হবে? রোযা হবে না, কিন্তু রোযার মর্যাদা রক্ষা হবে। তেমনি হায়েয বা নিফাসের অবস্থায় মহিলাগণ রোযা রাখতে পারেন না, কিন্তু কোনো মহিলা যদি দিনের বেলায় হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হন তাহলে তার কর্তব্য, বাকী দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা। (যদিও হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত অবস্থায় তার পানাহারের অনুমতি আছে। তবে সেক্ষেত্রেও নিয়ম হল গোপনে পানাহার করা।) একে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইম’ বলে। অর্থাৎ রোযাদারের সাদৃশ্য অবলম্বন। এ বিধান তো রমযানের মর্যাদার জন্যই দেওয়া হয়েছে।
চিন্তা করার বিষয় এই যে, অনেক ক্ষেত্রে শরীয়তে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইমীন’(রোযাদারগণের সাদৃশ্য গ্রহণ)-এর বিধান আছে। এর তাৎপর্য রমাযানের মর্যাদা রক্ষা করা। যেমন মুসাফিরের জন্য রোযা না-রাখার অবকাশ থাকলেও কোনো মুসাফির যদি দিনের বেলা মুকীম হয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য, অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা। এতে কি রোযা হবে? রোযা হবে না, কিন্তু রোযার মর্যাদা রক্ষা হবে। তেমনি হায়েয বা নিফাসের অবস্থায় মহিলাগণ রোযা রাখতে পারেন না, কিন্তু কোনো মহিলা যদি দিনের বেলায় হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হন তাহলে তার কর্তব্য, বাকী দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা। (যদিও হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত অবস্থায় তার পানাহারের অনুমতি আছে। তবে সেক্ষেত্রেও নিয়ম হল গোপনে পানাহার করা।) একে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইম’ বলে। অর্থাৎ রোযাদারের সাদৃশ্য অবলম্বন। এ বিধান তো রমযানের মর্যাদার জন্যই দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে আনুগত্য ও সমর্পণ, আর সবচেয়ে অপ্রিয় অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ। তাই অন্তরের অবাধ্যতার মতো বাহ্যিক অবাধ্যতা থেকেও আত্মরক্ষা প্রয়োজন। এমনকি অবাধ্যতার সামান্য সাদৃশ্য থেকে বেঁচে থাকাও মুমিনের কর্তব্য। ইসলামে সাদৃশ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। মশহুর হাদীস-
من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থাৎ যার সাদৃশ্য যে সম্প্রদায়ের সঙ্গে বস্ত্তত সে তাদেরই একজন।’
৩. যেসব গুনাহের কাজ প্রকাশ্যে ও ব্যাপকভাবে করা হয় সেগুলো থেকে নিজেও বিরত থাকা, অন্যকেও বিরত রাখা। যেমন গান-বাজনা, প্রাণীর ছবি ও প্রাণীমূর্তির প্রদর্শনী, বেপর্দা চলাফেরা ইত্যাদি।
৪. দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানাহার বন্ধ রাখা।
৫. পুরুষেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাতে আদায় করা। এ সময় বাইরে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, গল্প-গুজব ও অন্যান্য কর্মব্যস্ততা থেকে বিরত থাকা।
এরকম আরো বিষয় আছে। সর্বশেষ যে বিষয়টি বলে এ লেখা শেষ করছি তা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে এ মাসকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টের মাসে পরিণত না করা। অন্তত মুসলিম ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের তো কিছুটা ‘ত্যাগ’ স্বীকার করে হলেও এদিকে নজর দেয়া অতি জরুরি।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে তারাবীর নামায
بسم الله الرحمن الرحيم نحمد الله تبارك وتعالى، ونصلي على صفوة خلقه سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم، ال...
শাবান রমযান ঈদ : কিছু নিবেদন
আল্লাহ তাআলার অপার মেহেরবানী, তিনি আমাদেরকে ১৪৪৪ হিজরীর শাবান-রমযানে উপনীত করেছেন আলহামদু লিল্লাহ। আ...
রোযা পালনে পরস্পরে সহযোগী হই
মাহে রমযান। তাকওয়া অর্জনের মাস। সহমর্মিতার মাস। প্রতি বছরই সংযম ও নেক আমলের বার্তা নিয়ে এ মাসের আগ...
তারাবীতে কুরআন তিলাওয়াত এবং হাফেয ছাত্রদের করণীয়
তারাবীর নামাযে তিলাওয়াতে কুরআন সম্পর্কে কিছু কথা বলার ইচ্ছা আছে , যেগুলো খেয়াল রাখলে ফায়দা হবে ইন...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন