প্রবন্ধ
মাহে রমাযান সমাগত। রহমতের পয়গাম নিয়ে রাব্বুল আলামীনের বার্তাবাহক বান্দার দুয়ারে হাজির। বান্দা যদি তাকে বরণ করে যথাযথ মর্যাদায় আর শিরোধার্য করে রাব্বুল আলামীনের পয়গাম তাহলে দো'জাহানের কামিয়াবী তার পদচুম্বন করবে। গুনাহর সিয়াহী ও পাপের কালিমা থেকে মুক্ত হয়ে সে লাভ করবে হায়াতে তাইয়্যিবা-পবিত্র জীবন। আর তার সেতুবন্ধন তৈরি হবে চির পবিত্র ও সুমহান সত্ত্বার সাথে। তাই মাহে রমাযান রাব্বুল আলামীনের মহা নেয়ামত পৃথিবীর আলো-বাতাসের মতো এই নেয়ামতও আল্লাহ তাআলা সবার জন্য অবারিত রেখেছেন এবং যতদিন ইচ্ছা অবারিত রাখবেন। মাহে রমাযানে গায়বের জগতে সাজ সাজ রব পড়ে যায় আর আল্লাহ তাআলার করুণার সাগরে জোয়ার আসে। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন রমাযানুল মুবারকের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ নূরের জগতের এই আলোড়ন মাটির মানুষকেও আলোড়িত করে, এমনকি যে রূহ খাহিশাতের জিঞ্জিরে আবদ্ধ এবং যে কলব গাফলতের নিদ্রায় অভীভূত তাও মুক্তি ও জাগরণের স্পর্শ পেতে অস্থির হয়ে ওঠে। বান্দার রূহ ও কলবের এবং আত্মা ও হৃদয়ের এই আকুতিকে পূর্ণ করার জন্য রব্বুল আলামীন অনুগ্রহ করেছেন এবং বিধান দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি ফরয করা হল সিয়াম। যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন কর।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩) সওমের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে যে বেলা-হিসাব সওয়াব দান করবেন একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তার কারণ দর্শিয়ে বলেন, সওম হল একান্তই আমার জন্য। আর তার প্রতিদান দিব আমি নিজে। বান্দা তো আমারই জন্য কাম ও পানাহার বর্জন করে।’ (বুখারী ও মুসলিম) অতএব সওম ও রমাযানের যে মহা নেয়ামত আল্লাহ দান করেছেন বান্দার দায়িত্ব তার মর্যাদা রক্ষা করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযার দিনে তোমরা কেউ অশ্লীল কথা বলো না এবং হৈ চৈ করো না। কেউ যদি তোমার সাথে ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে বল, আমি তো রোযাদার।’ অন্য হাদীসে আছে, যে মিথ্যা ও পাপাচার বর্জন করে না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ অতএব রোযার মর্যাদা তখনই রক্ষা হবে যখন রোযাদার গুনাহ ও পাপাচার বর্জন করবে। আর গুনাহ বর্জনের এই প্রচেষ্টা তো গুনাহমুক্ত জীবন লাভেরই প্রয়াস। বান্দার এক মাসের গুনাহ বর্জনের প্রচেষ্টায় আল্লাহ তাকে দান করবেন তাকওয়া ও পরহেযগারীর এক পবিত্র জীবন যা তাকে উপযুক্ত করবে মালিকের সান্নিধ্য লাভের। মানুষের জীবন তো শুধু কিছু সময়। আর এই সময়ের আছে সমাপ্তি। সময়-পথের শেষে প্রত্যেকের জন্য রয়েছে নির্ধারিত মানযিল। তবে মুমিনের মানযিলে মাকসুদ হল চির পবিত্র ও চির শান্তির স্থান জান্নাত। অপবিত্র ও কালিমালিপ্ত অবস্থায় তো সেখানে প্রবেশ করা যাবে না। তাই সময়-পথের নির্দিষ্ট দূরত্বে রাব্বুল আলামীন প্রস্তুত রেখেছেন সময়ের হাম্মাম’। জীবন-পথের পথিককে যা দান করবে পবিত্রতা ও সজীবতা। মাহে রমাযান সমাগত হয়েছে। আমরা উপনীত হয়েছি সময়ের হাম্মামে। এখন কে কতটুকু পবিত্রতা ও সজীবতা অর্জন করবে তা নির্ভর করে আমাদের কর্ম ও সংকল্পের উপর। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সুবাসিত করুন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ঈদের দিনের সুন্নাত কয়টি
১. দুই ঈদের রাতে গুরুত্বসহ ইবাদত করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ قَامَ لَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ مُحْت...
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
৯ নভেম্বর, ২০২৪
৪৩৯৭১৫ বার দেখা হয়েছে
মাহে রমযান : ফযীলত ও করণীয়
মাহে রমযান বছরের বাকি এগার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক। ১. এ ...
মুফতী মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
৯ নভেম্বর, ২০২৪
২৮১২ বার দেখা হয়েছে
রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন এখন থেকেই…
হামদ ও সালাতের পর! চমৎকার দৃষ্টান্ত সম্মানিত হাজেরিন! অসংখ্য কল্যাণ, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের হাতছা...
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
৯ নভেম্বর, ২০২৪
১০২৫৪০৭ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন