প্রবন্ধ
ফযীলত ও বরকতময় মাসসমূহের একটি হল শা‘বান মাস। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় পুরো শা‘বান মাসই রোযা রাখতেন। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ১৯৬৯, ১৯৭০)
এ মাসে বনী আদমের ‘আমল আল্লাহ তা‘আলার দরবারে পেশ করা হয়। তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইতেন, তাঁর ‘আমল এমন সময় পেশ হোক যখন তিনি রোযাদার। (নাসায়ী শরীফ হাদীস নং- ২৩৫৭) শা‘বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্র (অর্থাৎ, ১৫ শা‘বানের রাত্র) মুসলিম সমাজে ‘শবে বরাত’ বা ‘লাইলাতুল বরাআত’ হিসেবে প্রসিদ্ধ। হাদীস শরীফে এ রজনীকে ليلة النصف من شعبان বা ‘অর্ধ শা‘বানের রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘লাইলাতুল বরাআত’ নামটিও হাদীস শরীফের মর্মার্থ থেকেই গৃহীত। অর্থাৎ, মুক্তির রজনী।
এ রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমজে বিভিন্ন মতামত, রসম-রেওয়াজ ও বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ হয়ত এ রাতের ফযীলতকে একেবারেই অস্বীকার করছে এবং এ রাতের নফল ইবাদত-বন্দেগীকে বিদ‘আত বলছে; আবার কেউ মনগড়া বিভিন্ন রসম-রেওয়াজ চালু করছে। তাই এখানে খুব সংক্ষেপে এ রজনী সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হচ্ছে:-
শবে বরাআতের ফযীলত সম্পর্কে কতিপয় হাদীস







এ রাতে করণীয়
এ রাতে আল্লাহ তা‘আলার যিকরে মশগুল থাকা, একনিষ্ট মনে কৃত পাপাচারের জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করা, নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, দরূদ শরীফ পাঠ করাসহ বিভিন্ন নফল ‘আমলে মশগুল থাকা এবং সকল পেরেশানী, রোগ, বিপদাপদ থেকে মুক্তি, হালাল রুজি-রুজগার ও সকল প্রকার প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে বিশেষভাবে দু‘আ করা।
ঐসকল গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং বেঁচে থাকা যা এই বরকতময় রাতের ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ ও দু‘আ কবূলের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত রাখে।
সকল মুমিন-মুসলমান একে-অপরের জন্য দু‘আ করা। মৃতদের জন্য দু‘আ করা।
নফল ইবাদত ঘরে করা উত্তম। তবে অলসতা বা ঘুমের আশংকা হলে মসজিদেও ইবাদত করা যাবে।
হাক্কানী উলামায়ে কিরামের ওয়াজ-নসীহত শুনা।
১৫ শা‘বান নফল রোযা রাখা।
এ রাতে বর্জনীয়
মনগড়া সকল রসম-রেওয়াজ, হালুয়া-রুটি, শিরনী-তবারক তৈরি ও বিতরণ করা, আতশবাজি, পটকাবাজি, ঘর-বাড়িতে আলোকসজ্জা করা, মাজারে মোমবাতি জালানো।
মাইকে মিলাদ-শবীনা পড়ে অন্যদের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো, মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করা, গল্প করা, দলবেধে সারা রাত হৈহুল্লোর ও আনন্দ উল্লাস করা।
নফল নামাযের নির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যা, নির্দিষ্ট সূরা, নামাযের বিশেষ পদ্ধতিকে আবশ্যক মনে করা ও মনগড়া ফযীলত বর্ণনা করা ইত্যাদি সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।
মোট কথা, এ রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা কোন ভিত্তিহীন কাজ নয়। এ রাতে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ রহমত নাযিল হয়ে থাকে, দু‘আ কবূল হয়ে থাকে ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির সাধারণ ঘোষণা হয়ে থাকে। তাই গাফেল ও অলসভাবে এ রাত কাটানো নিতান্তই বোকামী। বরং সকল ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত ‘আমল ও ইবাদতসমূহের পাবন্দ হওয়ার পাশাপাশি সমাজে প্রচলিত সকল মনগড়া কাজ, গর্হিত ও অহেতুক কর্মকান্ড বর্জন করে শবে বরাতের ‘আমলকে নফল ও মুস্তাহবের পর্যায়ে রেখে শবে বরাত উপলক্ষে ইবাদত বন্দেগী করা সাওয়াব ও বরকতের কাজ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সুরা ওয়াকীয়ার ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনার তাহকীক
সুরা ওয়াকিয়া পবিত্র কুরআনের ৫৬ তম সুরা। এ সুরার ফযীলত সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস এবং সাহাবি-তাবেয়ীদে...
'মুসলিম বাংলা' সম্পাদকীয়
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৭০৯৬ বার দেখা হয়েছে
মাহে রমাযান উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি
মাহে রমাযান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ নিয়ামত। এ মাসে ইবাদতের ময়দানে মাসব্যাপী...
'মুসলিম বাংলা' সম্পাদকীয়
৪ নভেম্বর, ২০২৪
৪৯১৪ বার দেখা হয়েছে
মুহাররম ও আশুরা : গুরুত্ব ও ফযীলত
মাহে যিলহজ্ব গত হয়ে শুরু হতে যাচ্ছে মুহাররম মাস। হতে যাচ্ছে একটি বছরের বিদায় আর একটি বছরের সূচনা। পশ...
মাওলানা আশিক বিল্লাহ তানভীর
১০ নভেম্বর, ২০২৪
১১৯৯৩ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন